ত্রিফলা কি, ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে জানেন কী? সহজ অর্থে বলা হলে ত্রিফলা একটি নির্দিষ্ট ফল বা ভেষজ নয় বরং এটি তিনটি ফল বা ভেষজের সংমিশ্রণের তৈরি একটি উপাদান। আক্ষরিক অর্থে যদি ত্রিফলা নামের অর্থ ব্যাখ্যা করা হয় তাহলে"তিনটি ফল অর্থাৎ আমলকি, হরতকি, বহেড়ার একএকে বা সংমিশ্রণকে ত্রিফলা বলা হয়। প্রাচীনকাল থেকেই ত্রিফলাকে আয়ুর্বেদের চিকিৎসকগণ ভেষজ বা ঔষধ হিসেবে ব্যবহার করতেন।
আজকে আমাদের আর্টিকেলের আলোচ্য বিষয় ত্রিফলা কি,ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা কী রয়েছে এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য। এই আর্টিকেলের মাধ্যমে ত্রিফলা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আপনাকে জানানোর চেষ্টা করব। সেহেতু আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
ত্রিফলা কি
এিফলা মূলত ৩টি ভেষজ ফলের সংমিশ্রণে তৈরি একটি ভেষজ উপাদান। ত্রিফলার ৩টি উপাদানের তালিকায় রয়েছে হরতকি,আমলকি ও বহেড়া। এই ৩টি উপাদান সমানুপাতিক মিশ্রণে তৈরি করে এিফলা চূর্ণ। এবার তবে এিফলা তৈরি করার উপায় উপায় সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক। প্রাচীন আয়ুর্বেদিক গ্রন্থে পাওয়া যায় যে, ত্রিফলার হাজারো গুণাগুন।
এিফলা তৈরির নিয়ম
শাঙ্গধর সংহিতা অনুসারে, এিফলা তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ১ ভাগ হরীতকী, ৪ ভাগ আমলকী ও ২ ভাগ বহেড়ার মিশ্রণ। সমানুপাতিক দিক থেকে হরীতকী,বহেড়া,আমলকীর অনুপাত হলো ১:২:৪। ত্রিফলা অর্থাৎ এই তিনটি ফল সমানভাবে চূর্ণ করে তৈরি করা হয় ত্রিফলা চূর্ণ।
ত্রিফলার দাম কত
বর্তমানে ত্রিফলা বাজারে ও অনলাইন মার্কেটপ্লেসে পাওয়া যায়। ত্রিফলা মূলত গ্রাম ও কেজি হিসেবে বিক্রি হয়ে থাকে। সাধারণত নিকটস্থ বাজারের মুদি দোকানে ত্রিফলা পাওয়া যায়। প্রতি এক গ্রাম ত্রিফলা চূর্ণের জন্য তারা ১ টাকা থেকে ১ টাকা ৫০ পয়সা পর্যন্ত রাখেন। তবে বর্তমান সময়ে ত্রিফলাচূর্ণ ও ত্রিফলা অনলাইন মার্কেটপ্লেসে পাওয়া যাচ্ছে। নিম্নে ত্রিফলার দাম সম্পর্কে বিস্তারিত উপস্থাপন করা হয়েছে:
বাংলাদেশের জনপ্রিয় ওয়েবসাইট দারাজে প্রতি ১০০ গ্রাম ত্রিফলা চূর্ণ ৭৫ টাকা থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ন্যাচারালস বিডি বাংলাদেশের স্বনামধন্য একটি প্রতিষ্ঠান যারা বিভিন্ন প্রয়োজনীয় ন্যাচারালস প্রোডাক্ট সেল করে থাকেন। ন্যাচারালস বিডিতে প্রতি ১০০ গ্রাম ত্রিফলা চূর্ণের দাম ১৪৫ টাকা ও ২০০ গ্রাম ত্রিফলা চূর্ণে দাম ১৯০ টাকা।
রকামরীতে ২০০ গ্রাম ত্রিফলা চূর্ণের দাম ১৬৬ টাকা মাএ।
এবার তবে ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জেনে নেওয়া যাক।
ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম
ত্রিফলা খাবার সর্বোত্তম উপায় হচ্ছে রাতে ঘুমানোর পূর্বে এক গ্লাস পানিতে এক চামচ ত্রিফলা চূর্ণ বা ত্রিফলা ভিজিয়ে রাখা ও সকালে উঠে ছাকুনি দিয়ে পানি ছেকে খালি পেটে পানি পান করা। অবশ্যই এিফলা ভিজানো পানি খালি পেটে সেবন করতে হবে এতে উপকারিতা বেশি পাওয়া যায়। ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম জানার পাশাপাশি ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক সময় জেনে রাখা অবশ্যই প্রয়োজন।
ত্রিফলা খাওয়ার সঠিক সময়
ত্রিফলা খাবার সঠিক সময় দিনের শুরুতেই বলা হয়। রাতে ঘুমাতে যাবার আগে এক কাপ ত্রিফলার গুড়া এক কাপ চলে সারা রাত ভিজিয়ে রাখুন ও সকালে উঠে পানি ছেকে এই পানি পান করুন। আপনি যদি চান তাহলে এর সাথে এক চামচ মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।
ত্রিফলা কতদিন খাওয়া যায়
এিফলা সাধারণ কোন সমস্যা ছাড়াই দীর্ঘদিন ধরে খাওয়া যায় যদি উক্ত ব্যক্তির ডায়রিয়া,অ্যালার্জি না থাকে ও উক্ত ব্যক্তি নারী হন তাহলে যতদিন গর্ভবতী ও স্তনদানকারী না হন। কারন এিফলা গর্ভবতী নারীদের জন্য ভালো নয়। এছাড়া যে কোন বয়সের মানুষ এিফলা খেতে পারেন। তবে এিফলা খাবার আগে আপনার নিকটস্থ বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন। এবার তবে ত্রিফলার জলের উপকারিতা ও এিফলার উপকারিতা জেনে নেওয়া যাক।
ত্রিফলার জলের উপকারিতা
এিফলা সেবন করা অর্থাৎ এিফলার জল সেবন করা একই অর্থ বহন করে। তবে ত্রিফলার জলের কারনে দাঁতের সুস্বাস্থ্য বজায় থাকে। দাঁতে থাকা যে হলদে ছোপ তা দূর হয় এিফলার জলের প্রভাবে। মাড়ি থেকে রক্ত পড়া বন্ধ হয়, মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। এক কথায় দাঁতের ও মুখের যেকোনো সমস্যা সমাধান করে থাকে এিফলা।
এিফলা পাউডার এর উপকারিতা
এিফলা সেবন করা ও এিফলা পাউডার ভিজানো পানি পা করা একই ভাবার্থ বহন করে। এক্ষেত্রে এিফলা সেবনে যেসকল উপকারিতা লাভ করা যায় এিফলা পাউডার এর একই উপকারিতা লাভ করা যায়। নিম্নে এিফলার উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
ত্রিফলার উপকারিতা
ত্রিপলা আর বেশ কিছু উপকারিতা রয়েছে যার কারণে প্রাচীনকাল থেকে আয়ুর্বেদে বিশেষ একটি স্থান দখল করে আছে। নিম্নে ত্রিফলার উপকারিতা সমূহ উপস্থাপন করা হয়েছে:
ত্রিফলা লিভার ফাংশন উন্নত করে। ত্রিফলার লিভারের কার্যকারিতা উন্নত করে এবং শারীরিককে বিষাক্ত পদার্থ থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে। ত্রিফলা লিভার পরিষ্কার এবং ডিটক্সিফাই করতে পারে। লিভারের রক্ত প্রবাহকে উন্নত করে ত্রিফলা।
>>> ত্রিফলায় থাকা গ্যালিক অ্যাসিড ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
>>>শরীরকে ডিটক্সিফাই করতে এিফলা বেশ কার্যকরী।
>>>চুল পড়া বন্ধ করতে ও নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে।
>>>দৃষ্টি শক্তি ভালো রাখে ও দৃষ্টিশক্তির কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
>>>দেহের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমিয়ে আনে।
>>>যারা হৃদ রোগের ঝুঁকিতে রয়েছেন, তাদের হৃদরোগের ঝুঁকি হ্রাস করে এিফলা।
বহুদিন ধরে যারা কোষ্ঠকাঠিন্য ও পাইলসের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য উওম কার্যকর সমাধান ত্রিফলা।
কিডনি ভালো রাখে ও কিডনির কার্যকরী ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে ত্রিফলা।
দীর্ঘদিন যারা ধরে যারা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য ত্রিফলা বেশ একটি কার্যকরী উপাদান। নিয়মিত ত্রিফলা সেবনে গ্যাস্ট্রিক সমস্যার সমাধান হয়ে যায়।
বর্তমান বিশ্বে যে সমস্যাটি তীব্র কারা ধারণ করেছে সেটি হচ্ছে ডায়াবেটিস। ডায়াবেটিসে নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য ত্রিফলা বেশ একটি কার্যকরী উপাদান।
এিফলা ওজন কমাতে সাহায্য করে। বিশেষ করে পেটের চর্বি কমাতে এিফলা বেশ কার্যকরী উপাদান।
দাঁতের সমস্যা সমাধান করে। বিশেষজ্ঞদের গবেষণা অনুযায়ী, দাঁতের ব্যথা ও মাড়ির প্রদাহ কমাতে এিফলা কার্যকর।
ত্রিফলা উপকারী হলেও বেশকিছু মানুষের জন্য এিফলা উপকারী নয়। তাহলে এিফলার অপকারিতা সম্পর্কে জেনে নেওয়া যাক।
এিফলা সম্পর্কে আয়ুর্বেদে যেমন রয়েছে হাজারো গুণাগুন তেমনি, এিফলাকে আয়ুর্বেদে এিদোষ হিসেবে সম্মোধন করা হয়েছে। কারন এিফলা বেশ কিছু রোগীদের জন্য বেশি মারাত্মক ক্ষতি করে। এর মধ্যে রয়েছে:
ডায়রিয়া রোগী: ডায়রিয়া রোগীদের কখনই এিফলা সেবন করা উচিত নয়। কারন এিফলা ভেষজ উপাদানটি প্রাকৃতিক ভাবে রেচক। ডায়রিয়া হলে এিফলা খেলে ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করতে পারে।
গর্ভবতী কিংবা স্তন্যদানকারী: বিশেষজ্ঞদের মতে,এিফলা খাওয়া কখনোই উচিত নয় গর্ভবতী ও স্তন্যদানকারী নারীদের। কারণ, এিফলার একটি উপদান হরতকি যা গর্ভপাত ঘটাতে পারে।
এিফলার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া
পৃথিবীতে এমন কোন ঔষধ বা ভেষজ ঔষধ নেই যার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয় না। তেমনি ত্রিফলাও এর ব্যতিক্রম নয়। ত্রিফলার পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য বেশকিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া নিম্নে উপস্থাপন করা হয়েছে:
অ্যালার্জি: ত্রিফলা সেবনের কারণে কিছু মানুষের অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে। যেমন ত্বকে চুলকানি, ফোলা ভাব, ফুসকুড়ি। এ অবস্থায় আপনি ত্রিপুরা খাওয়া বন্ধ করুন ও দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করুন।
ডায়রিয়া: অতিরিক্ত পরিমাণে ত্রিফলার সেবনে ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
মিথস্ক্রিয়া: বেশ কিছু ঔষধ রয়েছে যা ত্রিফলার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এক্ষেত্রে আপনার উচিত ত্রিফলা খাওয়ার আগে একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা।
বহুল আলোচিত প্রশ্নসমূহ ( FAQ)
(প্রশ্ন:০১) ত্রিফলা কোন কোন রোগের জন্য উপকারী ?
উত্তর: ত্রিফলা হজমশক্তি বৃদ্ধি, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা, রক্ত পরিষ্কার করা, ওজন কমানো, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে কার্যকরী। এটি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসেবেও কাজ করে এবং ত্বকের জন্য উপকারী।
(প্রশ্ন:০২) ত্রিফলা কি শিশুরা খেতে পারে?
উত্তর: সাধারণত শিশুদের ত্রিফলা দেওয়ার আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত, কারণ এর গুণাগুন এবং কার্যকারিতা শিশুদের শরীরে ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া করতে পারে ।
(প্রশ্ন:০৩) ত্রিফলা খেলে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় কি?
উত্তর: ত্রিফলা সাধারণত নিরাপদ, তবে অতিরিক্ত মাত্রায় খেলে ডায়রিয়া, পেটে ব্যথা এবং হজমে সমস্যা হতে পারে। নিয়মিত ও সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত।
(প্রশ্ন:০৪) ত্রিফলা কীভাবে সংরক্ষণ করা উচিত?
উত্তর: ত্রিফলা গুঁড়ো বা ক্যাপসুল একটি শুকনো এবং শীতল স্থানে, বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে যাতে এটি আর্দ্রতা থেকে সুরক্ষিত থাকে।
শেষ কথা
এিফলা একটি কার্যকরী ভেষজ উপাদান। প্রতিদিন নিদিষ্ট পরিমানে সেবন করে আপনার দেহ সুস্থ ও সবল রাখতে পারবেন। তবে সেবন করার আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে আলোচনা করবেন অবশ্যই। আশা করি আজকের এই আর্টিকেলের মাধ্যমে আজ আমরা আপনাকে, ত্রিফলা কি,ত্রিফলা খাওয়ার নিয়ম ও উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য জানাতে পেরেছি।
উপকারী একটি আর্টিকেল
ردحذف