সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি কবে চালু হয় বাংলাদেশে ২০২৪
১৯৭৯ সালের ৭ এপ্রিল
বাংলাদেশে সম্প্রসারিত টিকা দান কর্মসূচির ঘোষনা ও বাস্তবায়নের পর ১৯৮৫ সালে নিবিড়
টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। বিশ্ব স্বাস্হ্য সংস্হা (WHO) ১৯৭৪ সালের মে মাসে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি আরম্ভ করে বিশ্বব্যাপী
শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির অংশ হিসাবে। আরো ১০ বছর পরে ১৯৮৪ সালে বিশ্বব্যাপী
শিশুদের টিকাদান কর্মসূচির একটি বিরাট কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে। গণপ্রজাতন্ত্রী
বাংলাদেশ সরকার মারাত্মক রোগ প্রতিরোধের জন্য সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি ই, পি, আই পদক্ষেপ গ্রহন করে।
সঠিক সময়ে টিকা পাওয়া শিশুর জন্মগত অধিকার। তাই বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৯ সাল থেকে সম্প্রসারিত টিকাদান কর্সসূচীর(ই, পি, আই), মাধ্যমে ৭টি মারাত্মক রোগ হতে রক্ষা করার জন্য ১(এক) বছরের কম বয়সী সকল
শিশুদের টিকা দিয়ে আসছে। বর্তমানে শিশুদেরকে ১০টি রোগ প্রতিরোধের টিকা দেওয়া
হচ্ছে। এ ছাড়াও নবজাতককে ধনুষ্টংকারের কবল থেকে রক্ষা করার জন্য ১৫-৪৯ বছর বয়সী
সকল মহিলাকে সময়সূচি অনুযায়ী ৫ ডোজ টিটি টিকা দেওয়া হচ্ছে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০০৩ সাল থেকে সারাদেশে সম্প্রসারিত টিকাদান
কর্মসূচিতে হেপাটাইটিস-বি টিকা অন্তর্ভূক্ত করেছে এবং ২০০৯ সালে হিমোফাইলাস
ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি (HIB) টিকা সংযোজন করেছিল।গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্হ্য সেবায় সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি (ইপিআই) একটি
গুরুত্বপূর্ণ এবং সময় উপযোগী পদক্ষেপ। ইপিআই একটি বিশ্বব্যাপী কর্মসূচি যার মূল
লক্ষ্য হচ্ছে সংক্রামক রোগ থেকে শিশুদের অকাল মৃত্যু ও পঙ্গুত্ব রোধ করা।
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচি শুরু করার আগে প্রতি বছর প্রায় আড়াই লাখ শিশু ১০টি রোগে (শিশুদের যক্ষা, পোলিওমাইলাইটিস, ডিপথেরিয়া, হুপিংকাশি, পিসিভি, ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, হাম ও রুবেলা) মারা যেত। দেখা গেছে পাঁচ বছরের কম বয়সী রোগ ও মুত্যুর ঝুঁকি সবচেয়ে বেশী
এবং এই মুত্যুর তিন ভাগের এক ভাগ মারা যেত ডায়রিয়া রোগে, এক ভাগ ১০টি প্রতিরোধযোগ্য রোগে এবং বাকী এক ভাগ অন্যান্য রোগে ।
বাংলাদেশে টিকাদান কর্মসূচির উদ্দেশ্য
• শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার কমানো।
উদ্দিষ্ট জনগোষ্টি
• ০-১১ মাস বয়সী সকল শিশু (বর্তমানে
১৮ মাস)।
• ১৫ হইতে ৪৯ বছর বয়সের সন্তান
ধারণক্ষম সকল মহিলা।
প্রতিরোধ যোগ্য রোগ সমূহ:
• যক্ষা
• পোলিও মাইলিাইটিস
• ডিফথেরিয়া
• হুপিংকাশি
• ধনুষ্টংকার
• হেপাটাইটিস-বি
পিসিভি
• হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি
• হাম
• রুবেলা
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীর লক্ষ্যসমূহ:
(ক) টিকাদান অর্জনের লক্ষ্যমাত্রা
• ২০১০ সালের মধ্যে নিয়মিত টিকাদানের
প্রতিটি টিকার হার জাতীয় পর্যা্য়ে কমপক্ষে শতকরা ৯০ ভাগ এবং জেলায় কমপক্ষে শতকরা ৮০
ভাগে উন্নীত করা এবং তা অব্যাহত রাখা।
(খ) রোগ হ্রাসের লক্ষ্যমাত্রা
• পোলিও রোগ নির্মূল অবস্হা বজায়
রাখা
• নবজাতকের ধনুষ্টংকার দূরীকরণ
অবস্হা বজায় রাখা অর্থাৎ প্রতি বছর প্রতি জেলায় ১০০০ জীবিত জন্মে নবজাতকের ধনুষ্টংকারে
আক্রান্ত ১ এর নিচে রাখা।
• ২০১০ সালের মধ্যে হামের কারণে
মৃত্যূর হার ২০০০ সালে হামের মৃত্যুর হারের চেয়ে শতকরা ৯০ ভাগ কমিয়ে আনা। ২০০০ সালে
হামের কারণে শিশু মৃত্যূর সংখ্যা প্রায় ১৮ হাজার ছিল)
• ২০১০ সালের মধ্যে ৩-৫ বছর বয়সী
শিশুদের হেপাটাইটিস-বি এর দীর্ঘ মেয়াদী সংক্রমনের (HBsag) হার টিকাদান পূর্ববর্তী সময়ের
চেয়ে শতকরা ৮০ ভাগ হ্রাস করা (টিকাদান পূর্বর্তী সময়ের অর্থাৎ ২০০৩ সালের পূর্বে দীর্ঘ
মেয়াদী সংক্রমণের সংখ্যা ১ লক্ষ ৫০ হাজার)
• ২০১৫ সালের মধ্যে ৫ বছরের কম
বয়সী শিশুদের হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি ( Hib) সংক্রমণ জনিত মৃত্যূর হার ২০০৭ সালের সংক্রমণের
চেয়ে শতকরা ৯০ ভাগ হ্রাস করা।(২০০৭ সালে হিব সংক্রমণ জনিত মুত্যূর হার প্রায় ২৫ হাজার)
লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কৌশল
(ক) উজেলা ভিত্তিক মাইক্রোপ্ল্যান তৈরী এবং সঠিক বাস্তবায়ন
• গুণগত মান বজায় রেখে নিয়মিতটিকাদান সেশনের পরিকল্পনা।
• সহায়ক তত্ত্বাবধান পরিকল্পনা।
• টিকাদান কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নে
জনগণের সম্পৃক্ততা।
• মনিটরিং এবং উপাত্ত্ব বিশ্লেষণপূর্বক
কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
• মানুষ এবং অন্যান্য সম্পদের
যথার্থ পরিকল্পনা ও ব্যবস্হাপনা।
(খ) নিরাপদ ইনজেকশন ও ধারালো বরজ্য অপসারণ।
(গ) টিকাদান পরবর্তী বিরুপ প্রতিক্রিয়া বা এই এফ আই-এর ব্যবস্হাপনা।
(ঘ) রোগ নিরীক্ষণ।
(ঙ) বিশেষ টিকাদান কার্যক্রম (এন আ ডি, এম এন টি, ক্যাম্পেইন, মিজেলস ক্যাম্পেইন ইত্যাদি।
বাংলাদেশে ইপিআই কার্যক্রমের মাধ্যমে যে রোগ সমূহ প্রতিরোধ করা যায় যেমন-
বাংলাদেশে ইপিআই কার্যক্রমের মাধ্যমে টিকা দিয়ে যে রোগসমূহ প্রতিরোধ সেগুলো হল
শিশুদের যক্ষা, পোলিও মাইলাইটিস, ডিফথেরিয়া, হুপিংকাশি, মা ও নবজাতকের ধনুষ্টংকার, হেপাটাইটিস-বি, হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি, পিসিভি, হাম ও রুবেলা । এই রোগগুলি মারাত্মক সংক্রামক তবে টিকার মাধ্যমে এগলো
প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়েছে। এই রোগ গুলো এক বছরের কম বয়সী শিশুদেরকে আক্রান্ত করে ফলে
শিশুদের মৃত্যূর ঝুঁকির পরিমাণ অত্যন্ত বেশী থাকে।
নিম্নে রোগ গুলোর লক্ষণ, কারণ এবং প্রতিরোধের তথ্যাদি বর্ণনা দেয়া হলো।
শিশুর যক্ষা
যক্ষা কিভাবে ছড়ায়:
যক্ষা রোগে আক্রান্ত রোগীর সাথে ঘনিষ্ট সংস্পর্শ, আক্রান্ত রোগীর কাশি, হাঁচি ও থুতুর মাধ্যমে যক্ষা রোগের জীবাণু ছড়ায় এবং অন্যান্যদের আক্রান্ত করে।
লক্ষণ
• সব সময় জ্বর জ্বর ভাব ও সাথে কাশি থাকে।
• শিশু ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে যায় এবং ক্ষুধা কমে যায়।
• আক্রান্ত গ্রন্হি ফুলে যায় এবং পেকে ক্ষতের সৃষ্টি করে, সাধারণত: বগল বা ঘাড়ের গ্রন্তি আক্রান্ত হয়।
• ক্রমান্বয়ে শিশুর ওজন হ্রাস পেতে থাকে।
• হাড় আক্রান্ত হলে হাড়ের জোড়া ফুলে যায়, ব্রথা হয় এবং নড়াচড়া করতে পারেনা।
• মেরুদন্ড আক্রান্ত হলে ব্যথা এবং বাঁকা হয়ে যায়।
যক্ষা রোগের ভয়াবহতা
সময় মত সঠিক চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত শিশুর মৃত্যুও হতে পারে।
প্রতিরোধ
জন্মের পর পরই ১ ডোজ বিসিজি টিকা দিয়ে শিশুকে যক্ষা রোগ থেকে রক্ষা করা যায়। পোলিও মাইলাইটিস
(OPV)
পোলিও (OPV)রোগ কিভাবে ছড়ায়
পোলিও আক্রান্ত শিশুর মলের মাধ্যমে পানি ও খাবার জীবাণুযুক্ত হয়। এই জীবাণুযুক্ত পানি পান করলে বা জীবাণুযুক্ত খাবার গ্রহন করলে পোলিও রোগ হয়।
লক্ষণ
প্রথম ১-৩ দিন
• শিশুর সর্দি, কাশি এবং সামান্য জ্বর হয়।
৩-৫ দিন
• মাথা ব্যথা করে, ঘাড় শক্ত হয়ে যায়।
• শিশুর এক বা একাধিক হাত অথবা পা থলথলে ও অবশ হয়ে যায়।
• শিশু দাঁড়াতে চায়না এবং দাঁড় করাতে চাইলে শিশু কান্নাকাটি করে এবং নড়াচড়া করতে পারেনা।
• সোজা করেদাঁড় করলে আক্রান্ত পায়ের পাতা ঝুলে পড়ে।
• শিশুর আক্রান্ত অঙ্গ ক্রমশ: দুর্বল হতে থাকে এবং পরে স্হায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে।
ভয়াবহতা
শিশুর এক বা একাধিক অঙ্গ অবশ হয়ে যায়। ফলে আক্রান্ত অঙ্গ দিয়ে স্বাভাবিক কাজ করতে পারেনা। পরবর্তীতে আক্রান্ত অঙ্গের মাংসপেশী শুকিয়ে যায়। শ্বাস-প্রশ্বাসের পেশী অবশ হলে শ্বাস বন্ধ হয়ে শিশু মারাও যেতে পারে।
প্রতিরোধ
শিশুর জন্মের পর পরই ১৪ দিনের মধ্যে ০ ডোজ হিসাবে দুই ফেঁটা অরাল পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানো যেতে পারে, পরে রুটিন ইপিআই কেন্দ্রে নিয়ে অথবা যে সকল হসপিটালে টিকা দেয়া হয় সেখানে গিয়ে মিশুকে চার বারে চার ডোজ পোলিও খাওয়ালে পোলিও রোগ থেকে রক্ষা হয়।
ডিফথেরিয়া
ডিফথেরিয়া রোগের জীবাণু নাম কি
কিভাবে ছড়ায়
হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। ডিফথেরিয়া রোগের জীবাণু রোগাক্রান্ত শিশুর হাঁচি কাশির মাধ্যমে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে। সুস্হ্য শিশু আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে এলে এমনকি আক্রান্ত শিশুর ব্যবহৃত সামগ্রির (তোয়ালে, খেলনা ইত্যাদি) মাধ্যমে এ জীবাণু শরীরে প্রবেশ করলে এ রোগ দেখা দেয়।
ডিফথেরিয়া রোগের লক্ষণ
প্রথম ১-৩ দিন
• শিশু খুব সামান্যতেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে।
• ঠিকমতো খাবার গ্রহণ করেনা এবং খেলাধুলাতে অনীহা প্রকাশ করে।
• শিশুর জ্বর ও সর্দি-কাশি দেখা দেয়।
• গলা ফুলে যায় এবং কণ্ঠনালী বা গলদেশের ভিতরে সরের মতো সাদা পাতলা আস্তরন পড়ে।
৪-৬ দিন
• শিশু খুবই দুর্বল হয়ে পড়ে।
• কণ্ঠনালীর গ্রন্থিগুলো খুব বেশী ফুলে যায়।
• কণ্ঠনালীতে ধুসর রং-এর সুস্পষ্ট আস্তরন পড়ে।
• আস্তরনটি শ্বাসনালীতে ছড়িয়ে পড়ে এবং শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে।
ভয়াবহতা
প্রতিরোধ
তিন ডোজ পিসিভি (pcv) ভ্যাকসিন দিয়ে শিশুকে ডিফথেরিয়া রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।
হুপিং কাশি
হুপিং কাশি কি
হুপিং কাশি কিভাবে ছড়ায়
লক্ষণ
১ম সপ্তাহ
• শিশুর জ্বর হয়।
• নাক দিয়ে পানি পড়ে।
• চোখ, মুখ লাল হয়ে যায় এবং কাশি দেখা দেয়
২য় সপ্তাহ
• কাশি মারাত্মক আকার ধারণ করে।
• শিশু যখন কাশে তখন তার খুব কষ্ট হয় এবং চোখ স্ফতি ও লাল হয়ে যায়।
• কাশির পর পর শিশু ”হুপ” শব্দ করে শ্বাস নেয়, তবে ৬ মাসের কম বয়স্ক শিশু “হুপ” শব্দ ছাড়াও কাশতে পারে এবং বমি করতে পারে।
• অনেক সময় বমিও হয়।
•
যদি কাশি তিস সপ্তাহের বেশী সময় ধরে চলে, তাহলে
হুপিংকাশি বলে ধারণা করা যেতে পারে।
৩-৬ সপ্তাহ
কাশি ধীরে ধীরে কমে যায়।
ভয়াবহতা
প্রতিরোধ
মা ও নবজাতকের ধনুষ্টংকার
লক্ষণ
শিশু
জন্মের প্রথম ও ২য় দিন শিশু স্বাভাবিকভাবে কাঁদতে পারে এবং বুকের দুধ টেনে খেতে পারে।
পরবর্তীতে-
• জন্মের ৩-২৮ দিনের মধ্যে শিশু অসুস্হ্য হয়ে পড়ে।
• বুকের দুধ খাওয়া বন্ধ করে দেয়।
• মুখ ও চোয়াল শক্ত হয়ে যায় এবং জোরে কাঁদতে পারেনা।
• শরীর শক্ত হয়ে যায়।
• খিঁচুনি হয়।
• শরীর পেছনের দিকে ধনুকের মতো বাঁকা হয়ে যায়।
মা
• গর্ভকালীন সময় বা প্রসবের ৬ সপ্তাহের মধ্যে মা ধনুষ্টংকারে আকওান্ত হতে পারে। সাধারণত যে কোন ক্ষতের ২ থেকে ২১ দিনের মধ্যে ধনুষ্টংকার হতে পারে তবে বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে ১৪ দিনের মধ্যে হয়ে থাকে। • মায়ের ধনুষ্টংকারের লক্ষণ নবজাতকের ধনুষ্টংকারের মতো হয়ে থাকে, যেমন-চোয়াল শক্ত, ঘাড়ের ও শরীরের মাংশপেশী শক্ত, গিলে খেতে অসুবিধা এবং খিঁচুনি।
ভয়াবহতা
যে সকল কারণে শিশুর মৃত্যু হয় এর মধ্যে নবজাতকের ধনুষ্টংকারে আক্রান্ত শিশুমুত্যু একটি। ধনুষ্টংকার রোগে আক্রান্ত নবজাতক বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই মারা যায়। মাতৃমৃত্যুর শতকরা ৫ শতাংশ দায়ী মায়ের ধনুষ্টংকার।
প্রতিরোধ
১৫-৪৯ বছর বয়সের সন্তান ধারণক্ষম সকল মহিলাকে সময় সূচি অনূযায়ী ৫ ডোজ টিটি টিকা দিয়ে নবজাতক ও মায়ের ধনুষ্টংকার রোধ করা যায়। এছাড়া নিরাপদ প্রসব পদ্ধতি অভ্যাস করা ও নাড়ি কাটার জন্য জীবাণুমুক্ত ব্লেড ব্যবহার করা দরকার।
হেপাটাইটিস-বি
হেপাটাইটিস বি ভাইরাসকিভাবে ছড়ায়
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তির রক্ত ও শারীরিক দেহ রসের মাধ্যমে ছড়ায়। সাধারণত তরল পদার্থ ও ত্বকের সংস্পর্শেও এই রোগ ছড়াতে পারে। রক্তে
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস বহনকারী কারো রক্ত গ্রহণের ফলে এই রোগ হতে পারে। এছাড়াও, যৌন আচরণ যেমন যৌন সম্পর্ক, সমকামিতা, বীর্য পান করা, মুখমণ্ডলের যৌন ক্রিয়া, কিংবা চুম্বনের মাধ্যমেও এটি ছড়াতে পারে। একজন আক্রান্ত মায়ের থেকে তার সন্তানও এই রোগে আক্রান্ত হতে পারে।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস শরীরের বিভিন্ন তরল পদার্থ যেমন রক্ত, লালা, যোনী তরল, এবং বীর্যের মাধ্যমে ছড়ায়।
আমাদের দেশে ইনজেকশনের মাধ্যমেও এই রোগ বেশি ছড়ায়, বিশেষত যারা মাদকদ্রব্য গ্রহণ করেন, তারা একই সিরিঞ্জ কয়েকবার বা একাধিকজন ব্যবহার করে থাকেন। কিছু কিছু ক্ষেত্রে রক্ত সঞ্চালনের মাধ্যমে এই রোগ ছড়ালেও বর্তমানে এটি অনেক কমে গেছে।
যদি বাবা-মা
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত থাকেন, তবে সন্তানও আক্রান্ত হতে পারে, বিশেষ করে মায়ের ক্ষেত্রে। অঙ্গপ্রত্যঙ্গ প্রদান, শরীরে ট্যাটু করা, সার্জিক্যাল কাজ, এবং যৌন সম্পর্কের মাধ্যমেও সংক্রমণ হতে পারে।
হেপাটাইটিস বি একটি নিরাপদ ও কার্যকর ভ্যাকসিনের মাধ্যমে প্রতিরোধ করা যায়। সাধারণত জন্মের পরপরই এবং কয়েক সপ্তাহ পর বুস্টার দেওয়া হয়, যা প্রায় ১০০ শতাংশ সুরক্ষা প্রদান করে।
হেপাটাইটিস বি ভাইরাস এক জন হতে আরেকজনের শরীরে নিম্ন লিখিত উপায়েও সংক্রমিত হয়-
•
জন্মের সময় নবজাতক তার মায়ের কাছ থেকে সংক্রমিত হতে পারে। মা যদি সন্তান প্রসবের আগেই
হেপাটাইটিস-বি রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন তাহলে শিশুটি যখন তার মায়ের রক্ত বা জরায়ু হতে নি:সৃত রসের সংস্পর্শে আসে তখনই সংক্রমিত হয়।তবে বুকের দুধের মাধ্যমে
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সংক্রমণের প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
•
ইনজেকশন দেয়ার সময় জীবাণুমুক্ত সরঞ্জামাদি ব্যবহার না করলে বা নিরাপদ রক্ত সঞ্চালণের মাধ্যমে একজন
হেপাটাইটিস-বি রোগে আক্রান্ত লোকের দেহ হতে আরেকজন সংক্রমিত হতে পারে।
•
অনিরাপদ যৌন মিলনের মাধ্যমে
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস সংক্রমিত বা ছড়াতে পারে।
লক্ষণ
প্রথমবারের মতো যখন একজন কিশোর/কিশোরী বা প্রাপ্ত বয়স্ক লোক
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তখন তার মধ্যে সাধারণত নিম্নলিখিত লক্ষণ সমূহ প্রকাশ পায়-
• চোখ হলুদ হয়ে যায তখন একে জন্ডিস বলে।
• প্রস্রাবের রং হলুদ হয়।
• পেটে ব্যথা এবং সেই সাথে জ্বর হয়।
• ক্ষুধা-মন্দা এবং বমি বমি ভাব বা বমি হয়ে থাকে।
• মাংসপেশী ও হাড়ের সংযোগস্হলে (গিটে) ব্যথা হয়।
• আক্রান্ত ব্যক্তি সব সময় অশান্তিবোধ করে।
ভয়াবহতা
জীবনের শুরুতে
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুদের মধ্যে শতকরা ৯০ ভাগ
হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের দীর্ঘমেয়াদী বাহক হিসাবে কাজ করে এবং ৯০ ভাগের মধ্যে শতকরা ১৫-২০ ভাগ লিভার সিরোসিস ও লিভার ক্যান্সারের কারণে মৃত্যুমুখে পতিত হয়।
প্রতিরোধ
তিন ডোজ পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন দিয়ে শিশুকে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাস জনিত রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।
হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি
হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি এক ধরণের ব্যাকটেরিয়া যা শিশুদের দেহে মারাত্মক রোগের সংক্রমণ করে। এ সংক্রমণের মধ্যে অন্যতম হলো
ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস (ব্যাকটেরিয়া জনিত মস্তিস্কের সংক্রমণ এবং মারাত্মক নিউমোনিয়া। এছাড়াও এই ব্যাকটেরিয়া রক্ত, অস্হি, সন্ধি, হাড়, গলা, কান এবং হৃৎপিন্ডের আবরণের সংক্রমণ ঘটায়।
হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি কিভাবে ছড়ায়
এই রোগের জীবাণু রোগাক্রান্ত শিশুর হাঁচি, কাশির মাধ্যমে ছড়ায়। সুস্হ্য শিশু আক্রান্ত শিশুর সংস্পর্শে এলে এমনকি আক্রান্ত শিশুর ব্যবহৃত সামগ্রীর মাধ্যমে
হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি এর জীবাণু শরীরে প্রবেশ করে।
লক্ষণ
ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিস:
• মাথা ব্যথা, জ্বর, বমি ও ঘাড় শক্ত হয়ে যায়। উজ্জ্বল আলোর প্রতি সংবেদনশীল হয়।
• গিটে ব্যথা হয়।
• ঘুম ঘুম ভাব হয়।
• শরীরের তাপমাত্রা কমে যায়।
• অচেতন হয়ে যায়।
মারাত্মক নিউমোনিয়া:
• যে কোন একটি সাধারণ বিপদজনক লক্ষণ থাকে যেমন-পান করতে বা বুকের দুধ খেতে পারেনা, অথবা সব সময় খাবার বমি করে ফেলে দেয় বা খিঁচুনি হয়।শ্বাস নেয়ার সময় বুকের নিচের অংশ ভিতরের দিকে দেবে যায়। ঘন ঘন শ্বাস হয়।
ভয়াবহতা
সময় মতো সঠিক চিকিৎসা না করলে আক্রান্ত শিশু পঙ্গু হতে পারে। কোন কোন ক্ষেত্রে সঠিক চিকিৎসার পরও শিশুর মৃত্যু হতে পারে।
প্রতিরোধ
তিন ডোজ
পেন্টাভ্যালেন্ট ভ্যাকসিন দিয়ে শিশুকে
হিমোফাইলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা-বি জনিত রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।
নিউমোনিয়ার কারণ
ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া বা ছত্রাকের কারণে নিউমোনিয়া হয় এবং এই রোগে আক্রান্ত হলে শিশুদের ফুসফুস পুঁজ ও তরলে ভরে যায়, যার কারণে তাদের নিঃশ্বাস নিতে রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়। এই রোগটি বাংলাদেশে শিশুদের অন্যতম বড় ঘাতক, যার কারণে পাঁচ বছরের কম বয়সী ১৩ শতাংশ শিশুর মৃত্যু হয় নিউমোনিয়ার কারণে। (Pneumonia) ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগের নাম। এটি ফুসফুসের প্যারেনকাইমার প্রদাহ বিশেষ। ভাইরাস, ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া হয়। নিউমোনিয়া মৃদু বা হালকা থেকে জীবন হানিকরও হতে নিউমোনিয়া থেকে ফ্লু হবারও সম্ভাবনা থাকে। নিউমোনিয়া সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের, যারা দীর্ঘদিন রোগে ভুগছেন অথবা যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম তাদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। তবে তরুণ, অল্প বয়স্ক, স্বাস্থ্যবান লোকদেরও নিউমোনিয়া হতে পারে। ফুসফুসে স্ট্রেপটোকক্কাস জাতীয় ব্যাকটেরিয়া কিংবা শ্বাসযন্ত্রের সিনসিশিয়াল ভাইরাস (আরএসভি) সংক্রমণ ঘটালে ফুসফুস ফুলে ওঠে, পুঁজে বা তরল পদার্থে ভরে ওঠে, যা অক্সিজেন গ্রহণ করে নিঃশ্বাস নেওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। ফলে ফুসফুসে প্রদাহের সৃষ্টি হয়।
নিউমোনিয়ার জীবাণুর নাম স্ট্রেপটোকক্কাস
লক্ষণ:
ব্যাকটেরিয়াল নিউমোনিয়ার লক্ষণ:
- ধীরে ধীরে বা আকস্মিক সূত্রপাত।
- উচ্চ জ্বর (105 F বা 40.55 C পর্যন্ত)।
- হলুদ, সবুজ বা রক্তাক্ত শ্লেষ্মা সহ কাশি।
- ক্লান্তি।
- দ্রুত শ্বাস - প্রশ্বাস.
- নিঃশ্বাসের দুর্বলতা.
- দ্রুত হৃদস্পন্দন।
- ঘাম হওয়া বা ঠান্ডা লাগা।
- কাশি বা গভীর শ্বাসের সাথে পেটে ব্যথা, বুকে ব্যথা বিশেষ করে ।
- ক্ষুধামান্দ্য.
- নীলাভ ত্বক, ঠোঁট বা নখ (সায়ানোসিস)।
- বিভ্রান্তি বা পরিবর্তিত মানসিক অবস্থা।
ছোট বাচ্চাদের নিউমোনিয়ার লক্ষণ:
- জ্বর, ঠাণ্ডা, সাধারণ অস্বস্তি, ঘাম/উজ্জ্বল ত্বক।
- কাশি.
- দ্রুত শ্বাস প্রশ্বাস hfশ্বাস নিতে অসুবিধা ক্ষুধামান্দ্য.
- বমি।
- শক্তির অভাব.
- অস্থিরতা বা অস্থিরতা।
- শিশুদের মধ্যে লক্ষণ শ্বাসকষ্ট বা কোলাহল, প্রস্রাব কমে যাওয়া, ত্বক ফ্যাকাশে হওয়া, শীর্ণতা, কান্না বেড়ে যাওয়া, খাওয়ানোর অসুবিধা।
65 বছরের বেশি বয়স্কদের মধ্যে নিউমোনিয়ার লক্ষণ:
- চলমান স্বাস্থ্য পরিস্থিতির অবনতি।
- মানসিক অবস্থার হঠাৎ পরিবর্তন।
- কম ক্ষুধা।
- ক্লান্তি।
প্রতিকার
তিন ডোজ পিসিভি ভ্যাকসিন দিয়ে শিশুকে নিউমোনিয়া ভাইরাস জনিত রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।
হাম ও রুবেলা
হাম কিভাবে ছড়ায়
হাম একটি বায়ুবাহিত রোগ্ হামে আক্রান্ত শিশু থেকে এই রোগের জীবাণু বাতাসের মাধ্যমে সুস্হ্য শিশুর শরীরে প্রবেশ করে এবং হাম রোগে আক্রান্ত করে।
লক্ষণ
১-৩দিন
• প্রচুর জ্বর, সর্দি, কাশি এবং চোখ লাল হয়ে যায়।
চতুর্থ দিন
• জ্বর কমে আসে।
• শরীরে ও মুখে এবং লালচে দানা দেখা দেয়।
হামের দানা উঠার ৩-৪ দিন পর দানা কালচে খুসকির মতো হয়ে ঝরে যায়।
ভয়াবহতা
প্রতিরোধ
এক ডোজ হামের টিকা দিয়ে শিশুকে হাম রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।
রুবেলা
হাম ও রুবেলা দুটোর জন্য একই টিকা। রুবেলা দেয়া তাদের যে সকল কিশোরীদের বয়স ১৫ বছর পূর্ণ হয়েছে, যাতে পরবর্তীতে গর্ভকালীন সময়ে নানা ধরণের চর্মরোগ দেখা না দেয়। গর্ভাবস্হায় চর্মরোগ দেখা দিলে এর প্রভাবে নবজাতক নানা প্রতিবন্ধকতা নিয়ে জন্মাতে পারে তাই ১৫ বছর পূর্ণ হলে মেয়েদেরকে হামও রুবেলা টিকা দিতে হবে।