পুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের পরিকল্পনা কি করবো কখন করবো ।।

 পুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের পরিকল্পনা কি করবো কখন করবো

পুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের করণীয়


ভূমিকা:

বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার এক বিশাল অংশ বিভিন্ন ধরণের অপুস্টি জনিত জটিলতায় ভূগছে। অপুস্টি এমন এক স্বাস্হ্য সমস্যা যা প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে সঞ্চারিত হয়ে থাকে। শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ। একজন সুস্হ্য মা-ই জন্ম দিতে একটি সুস্হ্য শিশু। মা যদি অপুস্টিতে ভোগে তবে শিশুও অপুষ্টি জনিত জটিলতায় আক্রান্ত হবে। শিশুর বৃদ্ধি,রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা থেকে শুরু করে স্বাভাবিক জীবন-যাপন ব্যাহত হবে। বাংলাদেশে শিশু মুত্যুর একটি প্রধান কারণ অপুষ্টি। দারিদ্র ও খাদ্যের স্বল্পতাই শুধু অপুষ্টির কারণ, এই ধারণাটি সঠিক নয়। এ দেশের প্রকৃতিতে ছড়িয়ে আছে অনেক পুষ্টিকর খাবার । পুষ্টি সম্পর্কিত সচেতনতার অভাব ও সহজলভ্য খাদ্যের সঠিক ব্যবহার জ্ঞানের অভাবই এই দেশে অপুষ্টিজনিত সমস্যার মুল কারণ । জন্মের পর থেকে ৬ মাস পর্যন্ত শিশুকে শুধুমাত্র বুকের দুধ খাওয়াতে হবে । ৬ মাস বয়স থেকে শিশুকে বুকের দুধের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমানে পরিপূরক খাদ্য প্রদান করা প্রয়োজন । এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় সচেতনতা এখনো তৈরী হয়নি । সাধারণ পুষ্টিজ্ঞানের অভাব, কুসংস্কার ও অস্বাস্হ্য সম্মত অভ্যাসগুলো বাংলাদেশের জনগণকে পিছিয়ে রেখেছে । কোন খাবারে কি ধরনের পুষ্টি রয়েছে তা আমাদের সকলের জানা উচিৎ ।

পুষ্টি সমস্যার গুরুত্ব উপলব্দি করে বাংলাদেশ সরকার শিশুদের সুষম পুষ্টি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে পুষ্টিকে শিশুর মৌলিক অধিকার হিসাবে ঘোষণা করেছে এবং মিলেনিয়াম ডেভেলপমেন্ট গোল এ একে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে । পাশাপাশি গর্ভবতী ও প্রসূতি মায়ের সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে নানা কর্মসূচী গ্রহন করেছে। পুষ্টি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ।

বাংলাদেশে বিগত কয়েক বছর যাবত পুষ্টি সপ্তাহ পালন হয়ে আসছে যার অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য দেশব্যাপী স্বাস্হ্য সেবার সাথে জড়িত সর্বস্তরের চিকিৎসা কর্মীর মধ্যে পুষ্টি সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা যা তাদের প্রতিদিনের কর্মজীবনে পুষ্টি সম্পর্কিত নানা ধরণের সমস্যা সমাধানে সহযোগীতা করবে এবং প্রকারন্তরে দেশের সার্বিক জনস্বাস্হ্যের উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে যাতে পুষ্টি সম্পর্কিত ধারণার পাশাপাশি মা ও শিশুর পুষ্টির প্রতি প্রভাব পড়বে । 

আমাদের দেশের অপুষ্টিজনিত সমস্যা সমাধানের জন্য গর্ভাবস্হায় ও প্রসূতিকালীন সময় থেকেই পরিবারের সকলকে মায়েদের পুষ্টি ও যত্ন নিশ্চিত করতে হবে এবং এ ব্যাপারে মায়েদেরকে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করতে হবে। জন্মের পর পরই শিশুর সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করতে বুকের দুধ খা্ওয়ানোর পাশাপাশি শিশুর বৃদ্ধির বিভিন্ন পর্যায়ে সঠিক পুষ্টি কিভাবে নিশ্চিত করা যায় এ ব্যাপারে বৈজ্ঞানিক ও স্বাস্হ্যকর্মীগণের কাউন্সিলিং মানুষের দোরগোড়ায় যথাযথভাবে পৌছাতে হবে যাতে বাংলাদেশে মা ও শিশুর পুষ্টি শতভাগ রক্ষা হয়।

সুস্হ্য শিশু, সুন্দর ভবিষ্যৎসুস্হ্য জাতি গঠনে সুস্হ্য মা ও সুস্হ্য শিশুর বিকল্প নেই । সঠিক পুষ্টিই পারে সুস্হ্য মা ও শিশু উপহার দিতে তাই আমাদের সকলকে পুষ্টি সচেতন হতে হবে । যতক্ষন গর্ভবতী মা ও নবজাতক শিশুর পুষ্টির মানদন্ড নিশ্চিত না হবে ততক্ষন আমরা সুস্হ্য জাতি গঠন করতে সক্ষম হবোনা। তাই আগে গর্ভবতী মায়ের যত্ন নিতে হবে অবহেলা না করে । আরো পড়ুন


পুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের করণীয়


বাংলাদেশের ঘরে ঘরে পুষ্টিজনিত সমস্যা লেগেই আছে । আর এ সমস্যা আমাদের অসচেতনতাই সৃষ্টি করেছে । আর এ অপুষ্টিজনিত সমস্যার সমাধান পেতে চাই সচেতনতা বা জ্ঞান । শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্হ্য একজন নাগরিকই দেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ । আর পুষ্টিই হচ্ছে সুস্বাস্হ্যের প্রধান নিয়ন্ত্রক । মাতৃগর্ভ হতে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত প্রতিটা মানুষের পুষ্টির প্রয়োজন । তবে মা ও শিশুর পুষ্টির বিষয়টি সবচেয়ে বেশী গুরুত্বপূর্ণ । দেশের জনসংখ্যাকে জনসম্পদে রুপান্তরিত করতে হলে সর্বাগ্রে মা ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে ।

পুষ্টিগুণ রক্ষার্থে মায়ের দুধের বিকল্প নেই । শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যু ইতিমধ্যে অনেকটা হ্রাস ও পেয়েছে । সরকার ও বিভিন্ন সহযোগী এন, জি ও দের ব্যাপক ভূমিকার ফলে আজ শিশুমৃত্যু ও মাতৃমৃত্যূ কমে এসেছে তেমনি পুষ্টিগুন সমৃদ্ধ খাদ্য প্রতিটা নাগরিকের জন্য নিশ্চিত করে অপুষ্টিকে রোধ করতে হবে।

সুস্হ্য জীবনপ্রতিটা নাগরিকের অধিকার । সুস্হ্য জাতি পেতে হলে প্রতিটা মাকেই আগে সুস্হ্য জীবন দিতেহবে । মায়ের শারীরিক ও মানসিক সুস্ততা শতভাগ নিশ্চিত করতে হবে কারন মা হতেই সুস্হ্য শিশু। যে মা সুস্হ্য ও স্বাস্হ্যবান শরিীরিক ও মানসিক দিক দিয়ে সে মা ই পারে একটা সুস্হ্য সন্তান জন্ম দিতে । যদি মা ও অপুষ্টিতে ভোগেন এমতাবস্হায় সে অপুষ্টিকর শিশু জন্ম দিবে। আমরা সকলেই চাই সুস্হ্য, সুন্দর শিশু কিন্তু মায়ের সুস্বাস্হ্য নিশ্চিত করিনা ।

পুষ্টি কি?

পুষ্টি হচ্ছে একটি গতিশীল প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে গৃহীত খাদ্য পরিপাক ও শোষিত হয়ে শরীরে শক্তি যোগায়, বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয় পূরণ করে সর্বোপরি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করে। সহজভাবে বলা যায়, পুষ্টি হচ্ছে খাদ্য, স্বাস্হ্য, পরিরচর্যা ও পরিবেশের প্রতিফলন।

অপুষ্টি কি?

অপুষ্টি হচ্ছে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব। নিম্নলিখিত কারণ গুলো ক্রমাগত চলতে থাকলে শরীরে প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব দেখা দেয় যার কারণে বিভিন্ন রকম জঠিল ও কঠিন অবস্হার সৃষ্টি হয়।

  •  ১) সুষম খাদ্য না হলে।
  •  ২) অপরিমিত বা অপর্যাপ্ত খাদ্য গ্রহন করলে।
  •  ৩) খাদ্য হজম ও শোষণ প্রক্রিয়ায় ব্যাঘাত ঘটলে।
  •  ৪) এক বা একাধিক পুষ্টি উপাদানের ঘাটতি হলে।

 বৃদ্ধির জন্য সঠিক পুষ্টি কেন গুরুত্বপূর্ণ?

  •     ১)ছেলে কিংবা মেয়ে উভয়ের ক্ষেত্রেই নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম ও সঠিক খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলার আদর্শ সময় শারীরিক বৃদ্ধির বয়স।
  •     ২) কৈশোরের পুষ্টিগত সমস্যার শুরু হয় শৈশব হতেই, আর বয়োবুদ্ধির সাথে সাথে এটি অব্যাহত থাকে। এই কারণে সঠিক পুষ্টি বাড়ন্ত বয়সীদের জন্য প্রাপ্ত বয়স্কদের থেকে অধিক গুরুত্বপূর্ণ।
  •     ৩) বেড়ে উঠার সময়ে মেয়েদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা সঠিকভাবে মেটানো হলে পরবর্তী মাতৃত্বকালীন মা ও শিশুর মৃত্যু ঝুঁকি কমানো যায়, সেই সাথে বংশ পরস্পরায় অপুষ্টির দুষ্টচক্র বন্ধ করা যায়।
  •     ৪) শিশুদের বেড়ে উঠার সময়ে হরমোনের প্রভাবে গুরুত্বপূর্ণ শারীরিক, মানসিক ও জৈবরাসায়নিক পরিবর্তন সাধিত হয়। তাই সময়ে পর্যাপ্ত পুষ্টির চাহিদা মেটানো বিশেষভাবে প্রয়োজন।

সুষম খাদ্য কি?

সুষম খাদ্য হচ্ছে সেই খাদ্য যাতে শরীরের চাহিদা অনুযায়ী খাদ্যের সবগুলো পুষ্টি উপাদান, বয়স ও লিংগ ভেদে সঠিক মাত্রায় বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ সুষম খাদ্যে শক্তিদায়ক, শরীর বৃদ্ধিকারক ও রোগ প্রতিরোধ খাবার পরিমিত পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। সুষম খাদ্য নির্বাচনে অনেক বিষয় বিবেচনা করতে হয় যেমন-ব্যক্তির ওজন, লিংগ, শারীরিক অবস্হা, দৈহিক পরিশ্রম প্রভৃতি। নির্বাচিত খাদ্য থেকে মোট ক্যালরি চাহিদার ৬০-৭০% শর্করা, ২০-২৫% স্নেহ এবং ১০-১৫% আমিষ জাতীয় খাদ্য থেকে পাওয়া উচিৎ।

ক্যালরি কি?

খাদ্য শরীরেতাপ ও শক্তি যোগায়। খাদ্যশক্তি মাপার একক হচ্ছে ক্যালরি বা কিলোক্যালরি।

এক গ্রাম তেল বা চর্বিতে ৯ ক্যালরি খাদ্যশক্তি থাকে পক্ষান্তরে এক গ্রাম আমিষ এবং শর্করাতে ৪ক্যালরি খাদ্যশক্তি থাকে। ক্যালরি ঘাটতি হলে শরীর দুর্বল হয়ে যায়, ওজন কমে যায় এবংকাজ করার ক্ষমতা লোপ পায়।

খাদ্য ও পুষ্টির মধ্যে সম্পর্ক কি

সু-স্বাস্হ্যের সাথে সুষম খাদ্য গ্রহন সরাসরি সম্পর্কযুক্ত। তাই নিচের বিষয়গুলো ও মনে রাখা জরুরী-

  •     ১) সঠিক সময়ে সঠিক খাবারটি সঠিক পরিমাণে গ্রহন।
  •     ২) ক্ষতিকর খাদ্যবস্তু পরিহার।
  •     ৩) দেহের খাবার থেকে পুষ্টি উপাদান গ্রহন নিশ্চিতকরণ, নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রম এবং              ব্যায়াম করা।

 পুষ্টি সমস্যা সমাধানে আমার চর্চা

    ***খাদ্য কি

খাদ্য হলো কঠিন বা তরল এমন কতগুলো প্রয়োজনীয় উপাদানের সমষ্টি যা গ্রহনের মাধ্যমে শরীরের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ও কর্মতৎপরতা বজায় থাকে, ক্ষয়পূরণ ও প্রয়োজনীয় সকল কাজে শক্তি সরবরাহ করে ও শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করে। সহজ সংজ্ঞা –সুস্হ্য জীবন-যাপন করার লক্ষ্যে আমরা যা কিছু খাই তাই খাদ্য।

***খাদ্যের উপাদান: খাদ্যের উপাদান ৬টি

  •  ১) শর্করা বা শ্বেতসার
  •  ২) স্নেহ বা তৈল
  •  ৩) আমিষ বা প্রোটিন
  •  ৪) ভিটামিন
  •  ৫) খনিজ লবণ
  •  ৬) পানি

***খাদ্যের কাজ কি কি:

        ১) শক্তি সরবরাহ করা। শর্করা বা শ্বেতসার জাতীয় যেমন-চাল, গম, আলু, চিনি ইত্যাদি এবং তেল সমৃদ্ধ খাবার যেমন-ঘি, মাখন,চর্বি ইত্যাদি হলো শক্তিদায়ক খাবার।

       ২) শরীর গঠন, ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধিসাধন করা। প্রাণিজ আমিষ যেমন মাছ, মাংশ, ডিম, দুধ এবং উদ্ভিদ আমিষ যেমন ডাল, বাদাম, মটরশুটি ইত্যাদি শরীর বৃদ্ধিকারক ও ক্ষয়পূরক খাবার।

      ৩) বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করা। ভিটামিন ও খনিজ লবণ সমৃদ্ধ খাদ্যসমূহ রোগ পওতিরোধ ক্ষমতা তৈরী করে। গাঢ় সবুজ ও রঙিন শাকসব্জি, বিভিন্ন ফলমূলে ভিটামিন ও খনিজ লবণ পাওয়া যায়।

***খাদ্য ও পুষ্টির উপাদান সমূহের বিশদ আলোচনা:

পুষ্টি উপাদান সমূহ হলো খাবার গঠনকারী উপাদান যা নানা রকম গুনে খাবারকে সমুদ্ধ করে তোলে এবং দেহের জন্য পরযাপ্ত পরিমাণে দরকার। খাদ্যের পুষ্টি উপাদান গুলোকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে যেমন-

(১) ম্যাক্রোনিউট্রিয়্যান্টস: শর্করা বা শ্বেতসার, স্নেহ বা তৈল, প্রোটিন বা আমিষ, পানি এগুলো ম্যাক্রোনিউট্রিয়্যান্টস। প্রতিদিন প্রয়োজন ভেদে পরযাপ্ত পরিমাণে (১০ অথবা ১০০ গ্রাম করে) এগুলো গ্রহন করা উচিৎ।

(2) মাইক্রোনিউট্রিয়্যান্টস: ভিটামিন ও খনিজ লবন হলো মাইক্রোনিউট্রিয়্যান্টস। এগুলোর প্রয়োজনীয় পরিমাণ অতি সামান্য (মাইক্রোগ্রাম অথবা মিলিগ্রাম) কিন্তু গুরুত্ব অপরিসীম।

খাদ্যের সবগুলো উপাদান, এদের কাজ, উৎস ও অভাবজনিত লক্ষণ সমূহ নিম্নে বর্ণনা করা হলো:

ম্যাক্রোনিউট্রিয়্যান্টস

শর্করা বা শ্বেতসার/কার্বোহাইড্রেট:

শর্করা বা শ্বেতসার হলো দেহের প্রয়োজনীয় শক্তির প্রধান উৎস। যে সকল খাবারে শর্করা বা শ্বেতসার পাওয়া যায় সেগুলো সহজলভ্য ও দামেও সস্তা। তাই অবাক হবার কিছু নেই যে আমাদের প্রতিদিনের খাবারের ৫০-৭০ ভাগ ক্যালরি আসে এ ধরণের সহজলভ্য সস্তা খাবার থেকে।

শর্করা বা শ্বেতসার জাতীয় খাবারের কাজ:

  (১) দেহের প্রয়োজনীয় শক্তির যোগান দেওয়া।

  (২) রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করা।

 (৩) খাবারের স্বাদ ও মিষ্টতা বৃদ্ধি করা।

 (৪) হজমে সহযোগীতা করা।

শর্করা বা শ্বেতসার খাবারের উঃস:

   ১) মিষ্টি জাতীয় খাবার: এগুলো সহজে হজমযোগ্য। যেমন- ফল, দুধ, মধু, গুড় ইত্যাদি।

   ২) শ্বেতসার জাতীয় খাবার হজমের জন্য বেশী সময়ের প্রয়োজন। যেমন- চাল, রুটি, পাউরুটি, ময়দা ইত্যাদি।

   ৩) আঁশ জাতীয় খাবার হজমে সহায়তা করে। যেমন- খোসাযুক্ত শষ্যদানা, সবুজ শাকসবজি, ডাটা ইত্যাদি।

শর্করা বা শ্বেতসার খাবার


শর্করা বা শ্বেতসার জাতীয় খাবারের অভাবজনীত লক্ষণ সমূহ:

   ১) শরীরের শক্তি কমে যাওয়া।

   ২) পেশী দুর্বল হয়ে যাওয়া।

   ৩) ত্বক শুস্ক হয়ে যাওয়া।

   ৪) হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পাওয়া।

   ৫) কোষ্টকাঠিন্য ও মলাশয়ের ক্যান্সার।


অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার গ্রহণের কুফল সমূহ:

   ১) অবসাদগ্রস্ততা ও অতিরিক্ত ওজন ।

   ২) ডায়বেটিস ।

   ৩) হৃদরোগ ও উচ্চমাত্রার কোলেষ্টেরল।


প্রোটিন বা আমিষ

প্রোটিন দেহের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, পেশী, রক্ত, ত্বক, নখএবং চুল গঠনকারী প্রধান খাদ্য উপাদান । ওপ্রাটিনের অনুপস্তিতিতে শরীর কোন কাজইকরতে সক্ষম নয়।

প্রোটিনের কাজ:

  ১) শরীরের সমস্ত জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় প্রোটিন অংশ গ্রহন করে।

  ২) শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন উপাদান যেমন-অক্সিজেন পরিবহন, সরবরাহ এবং সঞ্চয় করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

  ৩) শরীর বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।

  ৪)বিভিন্ন এন্টিবডি তৈরীর মাধ্যমে শরীরের সুরক্ষা নিশ্চিত করে।

প্রোটিনের উৎস:

প্রোটিনের উৎস দুই ধরণের যেমন-প্রাণিজ এবং উদ্ভিজ

·         প্রাণিজ উৎস: দুধ, দই, পনির, ডিম, মাছ, মাংস ইত্যাদি। প্রাণিজ উৎস থেকে প্রাপ্ত প্রোটিনে সকল প্রকার এমাইনো এসিড পাওয়া যায়। তাই এ প্রোটিনক উচ্চমান সম্পন্ন প্রোটিন বলা হয়।

·         উদ্ভিজ উৎস: ডাল, বাদাম, সিম, মটরশুটি ইত্যাদি। উদ্ভিজ উৎ থেকে প্রাপ্ত প্রোটিনে সকল প্রকার এমাইনো এসিড পাওয়া যায়না তাই এদেরকে নিম্নমান সম্পন্ন প্রোটিন বলে।

 প্রোটিনের অভাবজনিত লক্ষণ সমূহ:

·         ওজন হ্রাস ও অপুষ্টি

·         এডিমা: ত্বকের নিচে পানি জমে।

·         ভঙ্গুর চুল ও নখ।

·         দুর্বলতা ও আলস্য।

·         ধীর গতিতে ক্ষত নিরাময়।

স্নেহ বা তৈল/ফ্যাট:

দেহের প্রয়োজনীয় শক্তির ঘনিভূত উৎস হলো স্নেহ বা তৈল বা চর্বি। বর্তমানে এই খাদ্য উপাদানটিকে নিয়ে প্রচুর আলোচনা হয় এর ক্ষতিকারক প্রভাবের বিষয় চিন্তা করে। হৃদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, ডায়বেটিস এসব রোগের জন্য খাবারে অধিক পরিমাণ উপস্তিতিকেই প্রধান কারণ বলে মনে করা হয়। কথাটি একেবারেই ফেলৈ দেয়ার নয়। তবুও তৈল বা ফ্যাট আমাদের খাবারের গুরুত্বপূর্ণ পুষ্টি উপাদান।

স্নেহ বা তৈল জাতীয় খাদ্যের কাজ:

·         শক্তির প্রয়োজনীয় উৎস।

·         শরীরের কোষ প্রাচীর গঠনের প্রধান উপাদান।

·         শরীরকে অতিরিক্ত পানি ক্ষয়ের কবল হতে রক্ষা করে।

·         শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে রক্ষা করে।

·         শরীরের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি এসিড উপাদান তৈরী করে।

·         ভিটামিন এ, ডি, ই, কে-এর শোষণ,সংবহন ও সংরক্ষণে সহায়তা করে।

·         খাবারের স্বাদ বৃদ্ধি করে।

স্নেহ বা তৈল জাতীয় খাবারের উৎস:

স্নেহ বা তৈল জাতীয় খাবারের উৎ দুই ধরণেরযেমন-

·         প্রাণিজ উৎস: ঘি, মাখন, ক্রিম,ডিমের কুসুম, চর্বি যুক্ত মাছ এবং মাংস ইত্যাদি।

·         উদ্ভিজ উৎস: সকল প্রকার উদ্ভিজ, তেল শুকনো ফল, বাদাম, তৈলবীজ ইত্যাদি।

স্নেহ বা তৈল জাতীয় খাবারের অভাবজনিত লক্ষণ সমূহ:

মনোযোগহীনতা।

বিভিন্ন ধরনের ত্বকের সমস্যা ও খুশকি হওয়া।

দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়া।

বুদ্ধিমত্তা হ্রাস পাওয়া।

অতিরিক্ত চর্বিজাতীয় খাবার গ্রহনের ফলাফল:

উচ্চমাত্রার কোলেস্টেরল।

অতিরিক্ত ওজন।

হৃদরোগ।

সতর্কতা: দৈনিক খাবারে যে পরিমাণ শক্তিসমৃদ্ধ খাবার থাকবে তার মধ্যে স্নেহ বা তৈল জাতীয় খাবার থেকে প্রাপ্ত শক্তির পরিমাণ শতকরা ২০ ভাগের বেশী হওয়া উচিৎ নয়।

পানি

পানির আরেক নাম জীবন। মানব দেহের মোট ওজনের শতকরা ৭০-৮০ ভাগই হলো পানি। পানি শরীর গঠনে সহায়তা করে।

পানির কার্যানবলী: 

পানি শরীরের প্রধান উপাদান।

পানি শরীরের তাপমাত্রা ঠিক রাখতে সহায়তা করে।

পানি কোষের বিপাক ক্রিয়ায় কাজে লাগে।

পানি বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের বাহক হিসাবে কাজ করে।

পানি দূষিত পদার্থ শরীর থেকে বের করে দিতে সহায়তা করে।

পানির উৎস সমূহ:

নলকূপের পানি।

ফোটানো পানি।

বোতলজাত পানি।

খাবারে বিদ্যমান পানি।

বিভিন্ন রকম পানীয়।

সতর্কতা: উৎস যাই হোক না কেন পানি ব্যবহার করার আগে সম্পূর্ণরুপে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে।

পানির ঘাটতি জনিত সমস্যাসমূহ:

দেহে পানিস্বল্পতার সৃষ্টি করে।

কিডনিতে পাথর হয়।

অতিরিক্ত পানি শুন্যতা দেখা দিলে মৃত্যূ পর্যন্ত হতে পারে।

সতর্কতা: সুস্হ্য থাকতে হলে প্রতিদিন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে ২লিটার বা ৮-১০ গ্লাস পানি পান করতে হবে।

মাইক্রোনিউট্রিয়্যান্টস

ভিটামিন

ভিটামিন হলো জীবন ধারণের জন্য অপরিহার্য্য খাদ্য উপাদান। দেহে ভিটামিন অতি অল্প পরিমাণ লাগে, কিন্তু এর ঘাটতি দেখা দিলে নানান রকম অসুখ-বিসুখ দেখা দেয়। শরীর নিজ থেকে ভিটামিন তৈরী করতে পারেনা, তাই প্রতিদিনের চাহিদা মেটাতে প্রতিদিনের খাবারে সকল প্রয়োজনীয় ভিটামিন থাকা প্রয়োজন।

ভিটামিন দেহকোষের শর্করা বা শ্বেতসার, প্রোটিন এবং স্নেহ বা তৈলের বিপাক প্রক্রিয়ায় ও এদের ব্যবহারে সাহায্য করে। কিছু কিছু ভিটামিন দেহকে রোগ সংক্রমনের কবল থেকে রক্ষা করে।

ভিটামিনের শ্রেনীবিভাগ:

চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন: যে সব ভিটামিন তেল বা চর্বিতে দ্রবিভূত হয় তাদেরকে চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিন বল। চর্বিতে দ্রবনীয় ভিটামিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অংশ দেহের বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত থাকে। মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণে এই ভিটামিন গুলো গ্রহন করলে শরীরে বিষক্রিয়া হতে পারে। ভিটামিন ‘এ’, ভিটামিন ‘ডি’, ভিটামিন ‘ই’, ভিটামিন ;কে’ এই শ্রেনীর অন্তর্ভূক্ত। 

পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন: যে সব ভিটামিন পানিতে দ্রবীভূত হয় তাদেরকে পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিন বলে। পানিতে দ্রবনীয় ভিটামিনের প্রয়োজনের অতিরিক্ত অংশ শরীরে সঞ্চিত না থেকে প্রশ্রাবের সাথে শরীর থেকে বের হয়ে যায়। ভিটামিন-বি ও ভিটামিন-সি এই শ্রেনীর অন্তর্ভূক্ত।

ভিটামিন ‘এ’

শরীরে ভিটামিন ’এ’ এর কার্যকারীতা:

বিশেষ করে দেখতে সাহায্য করে রাতে ও কম আলোতে।

বিভিন্ন প্রকারের সংক্রমন থেকে রক্ষা করে।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বজায় রাখে।

দেহের ও হাড়ের স্বাভাবিক বৃদ্ধি ঘটায়।

শ্বাসতন্ত্রের ক্যান্সার, পরিপাকতন্ত্রের ক্যান্সার, মূত্রথলির ক্যান্সার প্রতিরোধে সাহায্য করে।

ভিটামিন ’এ’ এর উৎস সমূহ:

প্রণীজ উৎস:

দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, মাছের তেল, ডিম ও লিভার বা যকৃত।

উদ্ভিজ উৎস:

হলুদ, ও লাল কমলা ফলসমূহ এবং সবুজ শাক-সবজি।

ভিটামিন ‘এ’ এর অভাবজনিত লক্ষণ:

রাতকানা রোগ।

চোখ শুস্ক হওয়া, জ্বালাপোড়া করা।

চোখের কর্ণিয়া নরম হয়ে ঘা হয়ে যাওয়া।

ত্বক অমসৃণ ও শুস্ক হয়ে উঠা।

চোখের সাদা অংশে দাগ দেখা যাওয়া।

ভিটামিন “ডি”

শরীরে ভিটামিন “ডি” এর কার্যকারীতা:

ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস থেকে হাড়ের গঠনে সহায়তা করে।

মূত্রের সাথে ক্যালসিয়ামের নির্গমন প্রতিহত করে।

দেহে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস গ্রহনে সাহায্য করে।

ভিটামিন “ডি” এর উৎস সমূহ:

সূর্যের আলো, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, মাছের তেল ও ডিমের কুসুম। সুস্হ্য হাড়ের জন্য প্রচুর পরিমাণে দুধ পান করা ও বেশী করে সূর্যের আলো লাগানো উচিৎ।

ভিটামিন “ডি” এর অভাবজনিত লক্ষণ:

শিশুদের ক্ষেত্রে রিকেটস রোগ বা হাড়ের বৃদ্ধি রহিত হওয়া।

বয়স্কদের ক্ষেত্রে অস্তি নরম রোগ বা অষ্টিওম্যালাসিয়া।

ভিটামিন “ই”

শরীরে ভিটামিন “ই” এর কার্যকারীতা:

অকাল বার্ধক্য প্রতিরোধে সহায়তা করে।

স্বাভাবিক প্রজননের জন্য অপরিহার্য্য

চুল স্বাস্হোজ্জ্বল ও সুন্দর রাখে।

লোহিত রক্তক্ষণিকা তৈরীতে অত্যাবশ্যক।

ভিটামিন “ই” এর উৎস সমূহ:

শস্যজাতীয় খাবার নানা প্রকার ডাল, উদ্ভিজ তেল ও বাদাম

ভিটামিন “ই” এর অভাবজনিত লক্ষণ:

হেমোলাইটিক এনিমিয়া বা লোহিত রক্তক্ষণিকার ভাংগন

অকাল বার্ধক্য।

ভিটামিন “কে”

শরীরে ভিটামিন “কে” এর কার্যকারীতা:

রক্ত জমাট বাঁধতে ভূমিকা রাখে।

ভিটামিন “কে” এর উৎস সমূহ:

নানা রকমের ঘন সবুজ শাক-সবজি

ভিটামিন ”কে” এর অভাব জনিত লক্ষণ:

বাহ্যিক ও আভ্যন্তরিন রক্তক্ষরণ।

রক্ত জমাট বাঁধতে সময় লাগানো।

ভিটামিন “বি”/ভিটামিন “বি” কমপ্লেক্স:

ভিটামিন “বি” কমপ্লেক্স এর মধ্যে আছে যেমন-

ভিটামিন বি-১

ভিটামিন বি-২

নিয়াসিন।

ভিটামিন বি-৬

ভিটামিন বি-১২

ফলিক এসিড।

আয়োডিনের উৎস সমূহ:

আয়োডিন যুক্ত লবন।

সামুদ্রিক মাছ

আয়োডিনের অভাব জনিত লক্ষণ:

গলগন্ড রোগ।

স্মৃতিভ্রংশ।

কানে কম শোনা।

মানসিক প্রতিবন্ধকতা।

এনিমিয়া ও মহিলাদের ক্ষেত্রে রক্তস্রাব হওয়া।

স্বাস্হ্যকর ও ভাল খাবার

বৈচিত্রময় সুষম ও পরিমিত পরিমাণ খাওয়াই হলো স্বাস্হ্যকর খাবারের মূল কথা। সুস্বাস্হ্যের জন্য এই মূল নীতিগুলো অনুসরণ করে পছন্দের যে কোন খাবার খাওয়া যেতে পারে। নিছের পিরামিডে সব রকমের খাবার ও গ্রহনের নীতিমালা দেখানো হলো:


পুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের করণীয়



স্বাস্হ্যকর ও ভাল খাবারের ৫টি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত:

1. খাবারে বৈচিত্র থাকতে হবে। ভাত-রুটি জাতীয় প্রধান আহার, ডাল জাতীয় কাবার, শাক-সবজি, ফলমূল ও প্রাণীজ খাবার এই সবগুলো এক সাথে গ্রহন করতে হব।

2. প্রচুর পরিমাণে শাক-সবজি ও ফলমূল খেতে হবে। প্রতিদিন ৪০০ গ্রামের ও বেশী শাকসবজি ও ফলমূল খেতে হবে। নাস্তা হিসাবে চিনি বা চর্বি জাতীয় খাবার পরিহার করে নানা রকমের শাকসবজি ও ফলমূল খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।

3. নানা রকমের পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার খেতে হবে। পূর্ণ শস্যজাতীয় খাবার দিয়ে তৈরী রুটি, নুডলস, বিস্কুট এই সব বেছে নিতে হবে কারণ এগুলোতে আছে ফাইভার যা হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।

4. চিনি ও লবণ পরিমিত পরিমাণে গ্রহন করতে হব্ েযতটা পারা যায় লবণ ও চিনি কম ব্যবহার করে খাবার তৈরী করতে হবে, অীধক লবণ ও চিনিযুক্ত খাবার পরিহার করতে হবে।

5. কোলেষ্টেরল ও সম্পৃক্ত চর্বি কম রয়েছে এমন খাবার গ্রহন করতে হবে। প্রাণজি চর্বি বা সম্পৃক্ত তেল যেমন(নারিকেল তেল ও পাম ওয়েল) এর পরিবর্তে অসম্পৃক্ত উদ্ভিজ তেল বা ভেজিটেবল ওয়েল যেমন (অলিভ অয়েল, সয়াবিন তেল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, খর্ণ অয়েল) খাবার জন্য বেছে নিতে হবে। লাল মাংস যেমন (খাসী বা গরুর মাংস) এর পরিবর্তে সাদা মাংস যেমন (মুরগীর মাংস বা মাছ) খেতে হবে। দুধ ও অন্যান্য দুগ্ধজাতীয় কাবার যতটুকু সম্ভব কম অথবা ফ্যাট কমিয়ে গ্রহন করাই উত্তম।


  Related Post:

2 মন্তব্যসমূহ

নবীনতর পূর্বতন

p