ক্রিপ্টোকারেন্সি বলতে কি বুঝায় এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে শিখবো
ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) হলো ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা, যা ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ করা হয়। এটি কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা কোন দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণে থাকে না বা নিয়ম নেই। বরং এটি একটি বিকেন্দ্রীভূত প্রযুক্তি ব্লকচেইনের (Blockchain) উপর ভিত্তি করে পরিচালিত হয়।
ব্লকচেইন (Blockchain) হলো একটি ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল লেজার, যেখানে প্রতিটি লেনদেন একটি "ব্লক" হিসেবে সংরক্ষিত হয় এবং একাধিক ব্লকের একটি চেইন তৈরি হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সির (Cryptocurrency) কিছু বৈশিষ্ট্য নিম্নে তুলে ধরা হলো:
(১) বিকেন্দ্রীকরণ: ক্রিপ্টোকারেন্সি কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয় না।
(২) নিরাপত্তা: ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে লেনদেন সুরক্ষিত হয়, যা প্রতারণার সুযোগ কমায়।
(৩) গোপনীয়তা: ব্যবহারকারীদের পরিচয় সাধারণত গোপন রাখা হয়।
(৪) বৈশ্বিক লেনদেন: বিশ্বের যেকোনো স্থানে দ্রুত এবং সরাসরি লেনদেন করা যায়।
জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency):
বিটকয়েন (Bitcoin): প্রথম এবং সবচেয়ে বেশী পরিচিত ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) ।
ইথেরিয়াম (Ethereum): বিটকয়েনের পরের সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি, যা স্মার্ট কন্ট্রাক্ট (Smart Contracts) সাপোর্ট করে।
রিপল (Ripple): ব্যাংকগুলির জন্য ডিজাইন করা একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি, যা দ্রুত আন্তঃব্যাংক লেনদেন নিশ্চিত করে।
MATIC: ব্যাংকগুলির জন্য ডিজাইন করা একটি ক্রিপ্টোকারেন্সি, যা দ্রুত আন্তঃব্যাংক লেনদেন নিশ্চিত করে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)মূলত বিনিয়োগ, অনলাইন লেনদেন এবং কিছু ক্ষেত্রে পণ্য ও সেবা ক্রয়-বিক্রয়ের জন্য ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কে আবিস্কার করেন?
ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) বা বিশেষ করে বিটকয়েনের আবিষ্কারক হলেন একজন বা একটি গোষ্ঠী, যার ছদ্মনাম হলো সাতোশি নাকামোতো। ২০০৮ সালে সাতোশি নাকামোতো বিটকয়েনের শ্বেতপত্র (white paper) প্রকাশ করেন, যেখানে প্রথমবারের মতো বিটকয়েন ও ব্লকচেইন প্রযুক্তির ধারণা তুলে ধরা হয়। তবে, সাতোশি নাকামোটোর প্রকৃত পরিচয় এখনও অজানা। ২০০৯ সালে বিটকয়েনের প্রথম সংস্করণটি মুক্তি দেওয়া হয়, যা ক্রিপ্টোকারেন্সির সূচনা করে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কখন, কত সালে আবিস্কার হয়?
ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) প্রথম আবিষ্কৃত হয় ২০০৯ সালে। এটি শুরু হয়েছিল **বিটকয়েন** (Bitcoin) নামে প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি দিয়ে, যা সৃষ্ট করেছিলেন একজন বা একদল ব্যক্তি যাদের ছদ্মনাম **সাতোশি নাকামোটো** (Satoshi Nakamoto)। বিটকয়েনই ছিল প্রথম বিকেন্দ্রীভূত ডিজিটাল মুদ্রা, যা ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে কাজ করে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কত প্রকার ও কি?
ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) বিভিন্ন ধরনের হয়ে থাকে এবং প্রতিটি ভিন্ন ভিন্ন উদ্দেশ্যে ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে। প্রধানত ক্রিপ্টোকারেন্সি নিম্নলিখিত প্রকারভেদে বিভক্ত করা যায়:
১. *বিটকয়েন* (Bitcoin - BTC):**
- বিটকয়েন হল প্রথম ও সবচেয়ে পরিচিত ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency)। এটি একটি ডিজিটাল মুদ্রা যা কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ ছাড়া পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে লেনদেন করা হয়। বিটকয়েন ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে কাজ করে।
২. **অল্টকয়েন (Altcoins):**
- বিটকয়েনের পর তৈরি হওয়া সব ক্রিপ্টোকারেন্সি অল্টকয়েন নামে পরিচিত। এর মধ্যে অনেক ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে, যেমন:
- **লাইটকয়েন (Litecoin - LTC):** দ্রুত লেনদেনের জন্য এটি বিটকয়েনের একটি পরিবর্তিত সংস্করণ।
- **কার্ডানো (Cardano - ADA):** এটি একটি ব্লকচেইন প্ল্যাটফর্ম যা সুরক্ষা এবং স্থায়িত্বের উপর জোর দেয়।
৩. **স্টেবলকয়েন (Stablecoins):**
- এই ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি ফিয়াট (Fiat) মুদ্রা (যেমন ডলার) বা অন্যান্য সম্পদের সাথে আবদ্ধ থাকে, যা তার মানকে স্থিতিশীল রাখে। যেমন:
- **Tether (USDT)**
- **USD Coin (USDC)**
৪. **মেমকয়েন (Memecoins):**
- এ ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)মূলত মজার বা ইন্টারনেট মেমের উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়, কিন্তু মাঝে মাঝে এদের মূল্য ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পায়। যেমন:
৫. **NFTs (Non-Fungible Tokens):**
ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) হলো একটি দ্রুত পরিবর্তনশীল ও বহুমুখী প্রযুক্তি, যা বিভিন্ন প্রয়োজনে বিভিন্ন ধরনের সম্পদ ও মুদ্রার বিকাশের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
কিভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সি কাজ করে?
ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) একটি ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা যা ক্রিপ্টোগ্রাফির সাহায্যে সুরক্ষিত হয়। এটি সাধারণ মুদ্রার মতোই লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়, তবে এর কাজের পদ্ধতি একটু ভিন্ন। নিচে ক্রিপ্টোকারেন্সি কীভাবে কাজ করে তার একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেওয়া হলো:
১. **ব্লকচেইন প্রযুক্তি:**
ক্রিপ্টোকারেন্সির (Cryptocurrency)মূল ভিত্তি হল ব্লকচেইন প্রযুক্তি। ব্লকচেইন হল একটি বিকেন্দ্রীকৃত লেজার (বই) যেখানে সমস্ত লেনদেন রেকর্ড করা হয়। এটি বহু কম্পিউটারে বিতরণ করা হয়, এবং এতে করা প্রতিটি লেনদেন একটি "ব্লক" হিসেবে রেকর্ড হয়, যা অন্যান্য ব্লকের সাথে "চেইন" আকারে যুক্ত হয়।
২. **বিকেন্দ্রীকরণ:**
ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত নয়, যেমন একটি ব্যাংক বা সরকার। বরং, এটি একটি পিয়ার-টু-পিয়ার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, যেখানে অংশগ্রহণকারী প্রত্যেকটি ব্যবহারকারী লেনদেন যাচাই করে এবং লেনদেনের জন্য সম্মতিতে পৌঁছায়।
৩. **খনন (মাইনিং):**
খনন হল সেই প্রক্রিয়া যার মাধ্যমে নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) তৈরি হয় এবং ব্লকচেইনে লেনদেন যোগ করা হয়। খননকারীরা জটিল গণিত সমস্যার সমাধান করেন, এবং সফলভাবে সমস্যার সমাধানকারী খননকারীকে পুরস্কার হিসেবে নতুন ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) প্রদান করা হয়। এটি বিটকয়েনের মতো মুদ্রার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য।
৪. **ক্রিপ্টোগ্রাফি:**
৫. **লেনদেনের যাচাইকরণ:**
৬. **ওয়ালেট:**
৭. **লেনদেনের গতি এবং খরচ:**
৮. **বাজার মূল্য:**
ক্রিপ্টোকারেন্সির (Cryptocurrency) সুবিধা:
ক্রিপ্টোকারেন্সির (Cryptocurrency) বেশ কিছু সুবিধা রয়েছে, যা এটি জনপ্রিয় করেছে। এর মধ্যে প্রধান কয়েকটি সুবিধা হলো:
বিকেন্দ্রীকরণ: ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) কোন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্তৃপক্ষ বা প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে নয়। ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে এটি বিকেন্দ্রীকৃত, যা ব্যবহারকারীদের সরাসরি লেনদেন করতে দেয়।
নিরাপত্তা: ক্রিপ্টোকারেন্সিতে(Cryptocurrency) ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়, যা লেনদেনকে অত্যন্ত নিরাপদ করে। প্রতিটি লেনদেন ব্লকে রেকর্ড করা হয় এবং একবার রেকর্ড হলে তা পরিবর্তন করা অত্যন্ত কঠিন।
দ্রুত এবং স্বল্প খরচে লেনদেন: আন্তর্জাতিক লেনদেনগুলি ক্রিপ্টোকারেন্সির(Cryptocurrency) মাধ্যমে দ্রুত এবং কম খরচে সম্পন্ন করা যায়, কারণ এখানে কোনো মধ্যস্থতাকারীর প্রয়োজন হয় না।
গোপনীয়তা: ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সাধারণত গোপন থাকে। ব্যবহারকারীর নাম বা ব্যক্তিগত তথ্য ছাড়াই লেনদেন সম্পন্ন করা যায়, যা অনেকের কাছে আকর্ষণীয়।
অ্যাক্সেসযোগ্যতা: ইন্টারনেট সংযোগ থাকলেই বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) ব্যবহার করা যায়। বিশেষত ব্যাংকিং সুবিধা থেকে বঞ্চিত মানুষদের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হতে পারে।
সীমিত সরবরাহ: অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সির(Cryptocurrency) একটি নির্দিষ্ট সীমা থাকে, যেমন বিটকয়েনের ক্ষেত্রে ২১ মিলিয়ন বিটকয়েনের সীমা। এটি মুদ্রাস্ফীতি রোধে সহায়ক হতে পারে।
এই সুবিধাগুলো ক্রিপ্টোকারেন্সিকে(Cryptocurrency) একটি নতুন আর্থিক মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে, যা বিশ্বের অনেক মানুষকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ও বিকল্প বিনিয়োগের সুযোগ দিচ্ছে।
নতুনদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) :
ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) একটি ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা যা ক্রিপ্টোগ্রাফির মাধ্যমে নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এটি একটি বিকেন্দ্রীভূত সিস্টেমের মাধ্যমে কাজ করে, যা সাধারণত ব্লকচেইন প্রযুক্তি ব্যবহার করে। নতুনদের জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে জানার কিছু মৌলিক ধারণা নিচে দেওয়া হলো:
১. ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) কী?
ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) হলো একটি ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল মুদ্রা যা অনলাইনে লেনদেনের জন্য ব্যবহৃত হয়। এটি কোনো কেন্দ্রীয় ব্যাংক বা সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন নয়, ফলে এটি স্বাধীনভাবে লেনদেন করতে সক্ষম।
২. ব্লকচেইন (Blockchain) কী?
ব্লকচেইন (Blockchain) হলো একটি ডিজিটাল খাতা (লেজার) যেখানে সমস্ত লেনদেনগুলি ব্লক আকারে রেকর্ড করা হয়। একবার একটি ব্লক তৈরি হলে, সেটি পরিবর্তন করা যায় না, যা ক্রিপ্টোকারেন্সির নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।
৩. বিটকয়েন (Bitcoin) এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency):
বিটকয়েন হলো প্রথম এবং সবচেয়ে জনপ্রিয় ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) । এর পাশাপাশি ইথেরিয়াম, লাইটকয়েন, রিপল, এবং আরো অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সি আছে যেগুলি বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়।
৪. ওয়ালেট:
ওয়ালেট হলো সেই ডিজিটাল(Cryptocurrency) প্ল্যাটফর্ম যেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংরক্ষণ করা হয়। এটি হতে পারে একটি সফটওয়্যার ওয়ালেট (অ্যাপ্লিকেশন) বা হার্ডওয়্যার ওয়ালেট (ফিজিকাল ডিভাইস)।
৫. লেনদেনের পদ্ধতি:
ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) লেনদেন করার জন্য একটি পাবলিক কি (ঠিকানা) এবং একটি প্রাইভেট কি (পাসওয়ার্ড) ব্যবহার করা হয়। প্রাইভেট কি নিরাপদে রাখতে হবে, কারণ এটি হারিয়ে গেলে আপনার মুদ্রাও হারিয়ে যাবে।
৬. ঝুঁকি:
ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) বাজারটি অত্যন্ত উদ্বায়ী, অর্থাৎ এর মূল্য দ্রুত ওঠা-নামা করতে পারে। তাই বিনিয়োগ করার আগে ভালোভাবে গবেষণা করা জরুরি।
৭. নিয়মনীতি:
বিভিন্ন দেশে ক্রিপ্টোকারেন্সির (Cryptocurrency)উপর নিয়ন্ত্রণ বা বিধিনিষেধ রয়েছে। তাই আপনার দেশে এর বৈধতা এবং নিয়মনীতি সম্পর্কে জানা গুরুত্বপূর্ণ।
এগুলি হলো নতুনদের জন্য কিছু মৌলিক ধারণা। ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)সম্পর্কে আরও জানতে, বিভিন্ন অনলাইন কোর্স, ব্লগ, এবং ফোরামে অংশগ্রহণ করতে পারেন।
কেন ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) খারাপ ?
ক্রিপ্টোকারেন্সির(Cryptocurrency) বিপক্ষে কিছু সমালোচনার কারণ রয়েছে, যা এটিকে অনেকের দৃষ্টিতে "খারাপ" করে তোলে। এই কারণগুলো হল:
1. **অস্থিতিশীলতা**: ক্রিপ্টোকারেন্সির(Cryptocurrency) মূল্য খুব দ্রুত ওঠানামা করে। বিটকয়েন এবং অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল্য একদিনে অনেক বেশি বাড়তে বা কমতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
2. **বিপুল শক্তি খরচ**: ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) মাইনিং প্রক্রিয়ায় প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ খরচ হয়, যা পরিবেশের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষত, প্রুফ-অফ-ওয়ার্ক (Proof of Work) ভিত্তিক ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলো এই সমস্যা তৈরি করে।
3. **বেআইনি কার্যকলাপ**: ক্রিপ্টোকারেন্সির(Cryptocurrency) অপ্রকাশ্যতা এবং ট্রান্সাকশনের গোপনীয়তা এর ব্যবহারকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য আকর্ষণীয় করে তোলে। ডার্ক ওয়েবে মাদকদ্রব্য, অস্ত্র, এবং অন্যান্য বেআইনি সামগ্রী কেনাবেচার জন্য ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করা হয়।
4. **বিধিবিধানের অভাব**: অধিকাংশ দেশেই ক্রিপ্টোকারেন্সির উপর নিয়ন্ত্রণ বা আইন নেই, যা এটি ব্যবহারকারী এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করে। এই কারণে, অনেক মানুষ প্রতারণার শিকার হতে পারে।
5. **ট্যাক্স এবং আইনি ঝুঁকি**: ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয়কর সম্পর্কিত আইনি অনিশ্চয়তা থাকতে পারে। অনেক দেশে এর উপর কর নিয়মগুলি স্পষ্ট নয়, যা ভবিষ্যতে ট্যাক্স সম্পর্কিত ঝামেলা তৈরি করতে পারে।
6. **তুলনামূলকভাবে নতুন এবং অজানা**: ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) এখনও একটি তুলনামূলকভাবে নতুন প্রযুক্তি, এবং অনেকের কাছে এটি সম্পূর্ণরূপে বোঝা যায় না। ফলে এটি নিয়ে অনিশ্চয়তা ও সন্দেহের সৃষ্টি হয়।
এই কারণগুলো মিলিয়ে ক্রিপ্টোকারেন্সিকে অনেকেই "খারাপ" বলে বিবেচনা করেন, যদিও এর সমর্থকেরা এর বিপরীতে অনেক সুবিধাও তুলে ধরেন।
ডিজিটাল মুদ্রা বনাম ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)
ডিজিটাল মুদ্রা (Digital Currency) এবং ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) উভয়ই ডিজিটালভাবে পরিচালিত মুদ্রা, তবে তাদের মধ্যে কিছু মৌলিক পার্থক্য রয়েছে।
ডিজিটাল মুদ্রা:
1. **সংজ্ঞা**: ডিজিটাল মুদ্রা(Cryptocurrency) হলো যে কোনো ধরনের অর্থ যা ইলেকট্রনিকভাবে বা ডিজিটালি পরিচালিত হয়। এটি সরকারি মুদ্রা হতে পারে, যেমন কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত কেন্দ্রীয় ব্যাংক ডিজিটাল মুদ্রা (CBDC)।
2. **কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ**: ডিজিটাল মুদ্রা(Cryptocurrency) সাধারণত কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, যেমন সরকার বা ব্যাংক।
3. **নিয়ন্ত্রণ এবং বিধিনিষেধ**: এর উপর সরকারের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকে, এবং এটি প্রচলিত মুদ্রার মতোই নিয়মিত হয়।
4. **বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা**: সরকারি ডিজিটাল মুদ্রাগুলো সাধারণত অধিকতর গ্রহণযোগ্য এবং প্রচলিত আর্থিক সিস্টেমের সাথে সংযুক্ত থাকে।
*** ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency)
1. **সংজ্ঞা**: ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) হলো ডিজিটাল মুদ্রার একটি বিশেষ ধরণ যা ক্রিপ্টোগ্রাফি ব্যবহার করে লেনদেন সুরক্ষিত করে এবং নতুন ইউনিট তৈরি করা হয়। এর উদাহরণ হিসেবে বিটকয়েন, ইথেরিয়াম ইত্যাদি উল্লেখ করা যায়।
2. **বিকেন্দ্রীকৃত নিয়ন্ত্রণ**: ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) সাধারণত বিকেন্দ্রীকৃত হয়, অর্থাৎ কোনো কেন্দ্রীয় কর্তৃপক্ষ নেই। এটি ব্লকচেইন প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিচালিত হয়।
3. **স্বাধীনতা এবং গোপনীয়তা**: ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) লেনদেনগুলি সাধারণত সুরক্ষিত এবং ব্যক্তিগত হয়, এবং অনেক ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীদের উপর কম বিধিনিষেধ আরোপিত হয়।
4. **গৃহীত হওয়ার স্তর**: ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) এখনও অনেক দেশে সম্পূর্ণরূপে গৃহীত নয় এবং এর উপর বিভিন্ন নিয়ম এবং বিধিনিষেধ রয়েছে।
সংক্ষেপে:
ডিজিটাল মুদ্রা(Cryptocurrency) হলো ইলেকট্রনিক ফর্মে সরকারি মুদ্রা, যেখানে ক্রিপ্টোকারেন্সি হলো বিকেন্দ্রীকৃত ডিজিটাল মুদ্রা, যা নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তার উপর ভিত্তি করে তৈরি। দুটিরই সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে এবং এগুলোর ব্যবহারের উপর নির্ভর করে তা কীভাবে বিভিন্ন ব্যবস্থায় প্রয়োগ করা হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) নিরাপদ ?
ক্রিপ্টোকারেন্সির(Cryptocurrency) নিরাপত্তা একটি বিতর্কিত বিষয়। এর কিছু দিক নিরাপদ হলেও, কিছু ঝুঁকি রয়েছে। এখানে কিছু প্রধান দিক তুলে ধরা হলো:
নিরাপদ দিক:
1. **ব্লকচেইন প্রযুক্তি**: ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) ব্লকচেইন প্রযুক্তির উপর ভিত্তি করে কাজ করে, যা খুবই নিরাপদ এবং ডেটা পরিবর্তন করা প্রায় অসম্ভব।
2. **গোপনীয়তা**: ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) লেনদেন সাধারণত বেনামী হয়, তাই আপনার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষিত থাকে।
3. **কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের অভাব**: ব্যাংক বা সরকার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত না হওয়ায়, ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) কোনো কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণের আওতায় পড়ে না। তাই এটি কিছু ক্ষেত্রে আর্থিক স্বাধীনতা প্রদান করে।
ঝুঁকিপূর্ণ দিক:
1. **বাজারের অস্থিরতা**: ক্রিপ্টোকারেন্সির (Cryptocurrency) মূল্য খুব অস্থির। এর মূল্য দ্রুত বৃদ্ধি বা হ্রাস পেতে পারে, যা বিনিয়োগকারীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ।
2. **হ্যাকিং ও নিরাপত্তা ঝুঁকি**: ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) এক্সচেঞ্জ বা ওয়ালেটগুলি হ্যাক হতে পারে, এবং সেইসঙ্গে ফান্ড হারানোর ঝুঁকি থাকে।
3. **নিয়ন্ত্রনের অভাব**: যেহেতু ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) সরকার বা কোন কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণে নেই, তাই এতে প্রতারণার সুযোগ বেশি থাকে এবং প্রতারিত হলে আইনগত সহায়তা পাওয়া কঠিন।
সারসংক্ষেপ:
ক্রিপ্টোকারেন্সি(Cryptocurrency) প্রযুক্তিগতভাবে নিরাপদ হলেও, এর সাথে সম্পর্কিত ঝুঁকির বিষয়গুলো মাথায় রেখে সতর্কতার সাথে বিনিয়োগ করা উচিত। বিশেষ করে যাদের নতুন এ খাতে, তাদের জন্য ঝুঁকি খুব বেশি।
ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) স্বীকৃতি প্রদানকারী প্রথম দেশ কোনটি?
যেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিটকয়েনে লেন-দেনের প্রযুক্তি নেই তারা ছাড়া এল সালভেদরের এই নতুন আইনের ফলে দেশটির সব আর্থিক লেন-দেনে এখন বিটকয়েনকে বৈধ মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করতে হবে,
এল সালভেদরের যে সকল মানুষ প্রবাসে থাকেন এবং দেশে অর্থ পাঠান, তাদের পক্ষে এখন কাজটা অনেক সহজ হবে একথা প্রেসিডেন্ট নাইব বুকেলে বলেছেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি (Cryptocurrency) থেকে কিভাবে আয় করা যায়:
ক্রিপ্টোকারেন্সির (Cryptocurrency) ভবিষ্যৎ কি
ক্রিপ্টোকারেন্সি ও ব্লকচেইন:
তৃতীয় কোন পক্ষ কিংবা ব্যাংকের সাহায্য ছাড়া অর্থ হস্তান্তর করার সর্বাধুনিক এই ডিজিটাল প্রক্রিয়াটি ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্লকচেইন ব্যবহার করে সম্পন্ন করে। এতে ব্যাংকের চাইতে আরও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে কোন অর্থ লেনদেন নিশ্চিত করা হয় । সিস্টেমটি তাৎক্ষণিক এবং কোন ধরণের লুটপাট বা হারিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা বিহীন। এই প্রযুক্তির নাম হল ব্লকচেইন, যাকে বর্তমানে বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তিবিদ ভবিষ্যতের ব্যাংকিং টেকনোলজি হিসাবে দেখছেন। কিছু প্রভাবশালী দেশের কয়েকটি ব্যাংক ইতোমধ্যে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে এই প্রযুক্তির পেছনে। ২০০৯ সালে সর্বপ্রথম ডিসেন্ট্রালাইজড ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে বিটকয়েন সৃষ্টি করা হয়।
সাতোশি নাকামোতো - বিটকয়েনের রহস্যময় স্রষ্টা :
ব্লকচেইন সিস্টেম এবং সেটার জন্য প্রথম ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন ডিজাইন ও ডেভেলপ করেন সাতোশি নাকামোতো। কেননা সাতোশি নাকামোতোর পরিচয় এখনও জানা যায়নি। কোন ব্যাক্তি, গোষ্ঠি, প্রতিষ্ঠান বা কোম্পানির কোডনেম এটা হতে পারো । সাতোশি নাকামোতো ছদ্মনামে কোন এক ব্যক্তি বা গোষ্ঠী এই মুদ্রাব্যবস্থার প্রচলন করে যা পিয়ার-টু-পিয়ার মুদ্রা বলে অভিহিত হয় ২০০৯ সালে ।
সাতোশি নাকামাতো মানুষ নন অনেকে বলেন , এটি একটি টিম। এই টিম গুগলের ভেতরের একটা টিম , অথবা আমেরিকার এনএসএ (ন্যাশনাল সিকিউরিটি এজেন্সি) হয়তো একটা গবেষণা টিম তৈরি করে গোপনে এ কাজ করেছে। তারা পর্দার অন্তরালেই থেকে গেছে। দুনিয়াজুড়ে এত এত মিডিয়া, কম্পিউটার গিক ও হ্যাকার, তাদের সবার চোখকে ফাঁকি দিয়ে লুকিয়ে থাকা সাংঘাতিক একটা আশ্চর্য ব্যাপার।
ব্লকচেইন প্রযুক্তি:
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করে থার্ড পার্টির সাহায্য ছাড়া গোপনীয়তা ও নিরাপত্তা বজায় রেখে, একজন গ্রাহক হতে অন্য গ্রাহকের মধ্যে লেনদেনের একটি মাধ্যমই এই ব্লক চেইন। দ্বিতীয় কোন পক্ষের সাথে তৃতীয় কোন মাধ্যম (থার্ড পার্টি) ছাড়া সরাসরি বিনিময় মাধ্যম এই ব্লক চেইন প্রযুক্তি ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহার করে । তৃতীয় পক্ষ বলতে বিদ্যমান লেনদেনে সাহায্যকারী ও অনুমতি প্রদানকারী মাধ্যম গুলোকে বলা হচ্ছে। যেমন, আপনি ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম এ কোন বন্ধুর কাছে টাকা পাঠালে সেখানে ব্যাংক এর সাহায্য নেন যা মূলত থার্ড পার্টি অথবা দেশ থেকে বাইরে বৈধ ভাবে টাকা পাঠাতে সরকারের অনুমতি নিতে হয় যা ব্যতিরেক আপনি কারেন্সি আনা নেওয়া করতে পারেন না। আর এখানেই ব্লক চেইন প্রযুক্তি আপনাকে থার্ড পার্টির সাহায্য ব্যতিরেকে সহজেই লেনদেন করতে সাহায্য করবে। যার কোন ফিজিক্যাল উপস্থিত নেই ক্রিপ্টোকারেন্সি হিসেবে ডিজিটাল মানি কাজ করে ।
বেশি সম্ভাবনাময় একটি প্রযুক্তি ও প্লাটফর্মব্লক চেইন প্রযুক্তি ওয়েব ও ইন্টারনেট -এর মতো বা তার চেয়েও! এর দ্বারা বাস্তব জীবনে এবং অনলাইনে লেনদেন সংক্রান্ত ব্যাপারগুলো কোন প্রকারের ছাড়াই মিটিয়ে ফেলা যায়। নির্দিষ্ট একটি সময়ের মধ্যে সারা পৃথিবী জুড়ে যত অর্থের বা সম্পদের লেনদেন হচ্ছে সেই লেনদেনের সকল এনক্রিপটেড তথ্য একসাথে নিয়ে একটা ব্লক বানানো হয়। সেই ব্লক দিয়ে ক্রমানুসারে সাজানো সম্পূর্ণ অপরিবর্তনীয় একটা ডিস্ট্রিবিউটেড এবং ডিসেন্ট্রালাইজড লেজারকেই মূলত ব্লকচেইন বলা হয়।
অর্থনৈতিক কর্মকান্ডের যাবতীয় লেনদেন রেকর্ড করার জন্য লেজার বুক ব্যবহার করা হয় । সফটওয়্যারে এই রেকর্ড থাকে ডেটাবেইজে। ব্লকচেইন এরকম একটা লেজার, যেখানে পাশাপাশি একটার পর একটা এরকম অনেকগুলো ব্লক থাকে। প্রত্যেকটা ব্লকের ভিতর থাকে একটা সময়ে মাঝে সারা পৃথিবীতে যত ট্রানজেকশান হয়েছে সেটার সকল ডেটা। এই এনক্রিপ্টেড ডেটা পড়তে গেলে প্রাইভেট কী লাগবে। অর্থাৎ আপনি যদি এখানে ট্রাঞ্জেকশান করে থাকেন তাহলে সকল তথ্য আপনার নির্ধারিত প্রাইভেট কী ব্যবহার করে পড়তে পারবেন, অন্য কেউই পারবেনা। তবে মানুষ যেটা দেখবে তা হল ট্রানজেকশনের পরিমাণ। তবে কার অর্থ কার কাছে গিয়েছে জানা যাবেনা; কারন শুধুমাত্র পরিচয় এড্রেস দিয়ে চলে যাবে টাকা। কোন পরিচয় থাকবে না।
ব্লকচেইনের প্রত্যেকটা ব্লক সম্পূর্ণ অপরিবর্তনীয়। একবার চেইনে একটা ব্লক যোগ হয়ে গেলে সেটাতে কোন প্রকারের পরিবর্তন অসম্ভব। ব্লকগুলো পাশাপাশি তাদের সৃষ্টির ক্রমানুসারে বসে। প্রত্যেকটা ব্লক তার আগে কোন ব্লক আছ সেটা জানে। এভাবে একটা ব্লকের সাথে আরেকটা কানেক্টেড। ব্লকচেইন ডিস্ট্রিবিউটেড এবং ডিসেন্ট্রালাইজড সিস্টেম, অর্থাৎ সারা পৃথিবীতে বলতে গেলে একই ব্লকচেইনের সব ইউজার বা ক্ষেত্রবিশেষে বিশেষ ইউজারদের কাছে একেবারে কার্বন কপি আছে। কাজেই একটা বা শ-খানেক সার্ভার বা কম্পিউটার একসাথে নস্ট হয়ে গেলেও ব্লকচেইনের কিছুই হবেনা।
ব্লকচেইন প্রযুক্তির সুবিধা:
দুর্নীতি ও চুরি প্রতিরোধ:
এখানে তথ্য চুরি হওয়া অথবা দূর্নীতি হওয়া একেবারেই অসম্ভব প্রতিনিয়ত ইনফরমেশন গুলো আপডেট হওয়ার কারণে ।
স্বচ্ছতা: যখন ব্লকে ডেটা রেকর্ড করা হয়, তার পূর্বে একবার ব্লকচেইনের লেনদেন যাচাই করা হয়। এই সিস্টেমে ডেটা মুছে ফেলা যায় না, যার ফলে ডেটার স্বচ্ছতা বজায় থাকে।
তৃতীয় পক্ষের ঝামেলা থেকে মুক্তি: ব্লকচেইন প্রযুক্তির জন্য কোন তৃতীয় পক্ষের প্রয়োজন হয় না।
ক্রিপ্টোকারেন্সী বিটকয়েনের বৈধতা:
বিটকয়েনের বৈধতা স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করেনি বেশিরভাগ দেশ , বরং অপেক্ষা এবং দেখাতে পছন্দ করে। কিছু নিয়ন্ত্রক তত্ত্বাবধান করে বিটকয়েনের বৈধ ব্যবহারে পরোক্ষভাবে সম্মতি দিয়েছে। এল সালভাদর একমাত্র দেশ যা বিটকয়েনকে আইনি টেন্ডার হিসাবে স্বীকৃতি দেয়, ২০২১ সালে, ।
যুক্তরাষ্ট্র:
অস্ট্রেলিয়া:
ইউরোপ:
বাংলাদেশে কি ভাবছে:
বাংলাদেশে খুব সীমিত আকারে বিটকয়েন কেনাবেচার কথা জানা যায়। তবে আইন অনুযায়ী বিটকয়েন বা অন্য কোন ক্রিপ্টোকারেন্সি কেনাবেচা বা সংরক্ষণ করা বেআইনি বলে জানাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক সিরাজুল ইসলাম বিবিসি বাংলাকে বলছেন, বাংলাদেশে বিটকয়েনের কোন অনুমোদন নেই। যেহেতু অনুমোদন নেই, সুতরাং এই জাতীয় লেনদেন বৈধ নয়। ভার্চুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের দ্বারা মানি লন্ডারিং এবংবাংলাদেশ ব্যাংক সতর্ক করে দিয়েছে সন্ত্রাসে অর্থায়ন সম্পর্কিত আইনের লঙ্ঘন হতে পারে বলে। বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংক উল্লেখ করেছে এ ধরনের লেনদেনের মাধ্যমে আর্থিক এবং আইনগত ঝুঁকি রয়েছে বলে ।
‘ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিকানা, সংরক্ষণ বা লেনদেন স্বীকৃত না হলেও এটিকে অপরাধ বলার সুযোগ নেই মর্মে প্রতীয়মান হয় বলে গত ১৮ মে ২০২১ বাংলাদেশ ব্যাংকের বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগের সহকারী পরিচালক শফিউল আজম ক্রিপ্টোকারেন্সি নিয়ে ব্যাংকের অবস্থান জানিয়ে সিআইডিকে লেখেন, ।’ ওই চিঠিতে তিনি আরও বলেন, ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় লেনদেনের ফলাফল হিসেবে দ্বিতীয় পর্যায়ে বৈদেশিক মুদ্রা নিয়ন্ত্রণ আইন, ১৯৪৭; সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২–এর আওতায় অপরাধ হতে পারে। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সিআইডি এ নিয়ে অনুসন্ধান করে দেখতে পারে।
বিটকয়েনের আকাশ্চুম্বি দাম:
২০০৯ সাল হতে শুরু হয়ে গত ২০ অক্টোবর ২০২১ প্রতি বিটকয়েনের দাম ছাড়িয়েছে ৬৫ হাজার ডলার । সব ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সির মধ্যে যা ইতিহাসে সর্বোচ্চ। ইটিএফ একধরনের বিনিয়োগ তহবিল, যা স্টক এক্সচেঞ্জগুলোতে কেনাবেচা করা যায়। অথচ গত মাসেও দাম এত ছিল না। সেপ্টেম্বর শেষে বিটকয়েনের দাম ছিল ৪৩ হাজার ডলারের আশপাশে। পরবর্তীতে বাড়া-কমার মাধ্যদে ৫ ই জানুয়ারি ২০২২ এ এসে দাঁড়িয়েছে ৪৬,৭৬৭.৯১ মার্কিন ডলারে। বিটকয়েন নির্ভর আরও ইটিএফ যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে আসার অপেক্ষায় রয়েছে। দেশটির সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন পর্যালোচনা শেষে অনুমোদন দিলে সেগুলোর লেনদেন শুরু হবে।ক্রিপ্টোকারেন্সি- ঝুঁকি না সম্ভাবনার দুনিয়া:
ক্রিপ্টোকারেন্সির গোপনীয়তা পদ্ধতি ঈর্ষণীয়। এক সময়ের সুইস ব্যাংক গ্রাহকের মতো ক্রিপ্টোকারেন্সির মালিকের নামটির গোপনীয়তা চূড়ান্ত ভাবে রক্ষিত। আর যেখানেই গোপনীয়তা, সেখানেই করের হিসাব রাখা দুষ্কর। এর লেনদেন জানা প্রায় অসম্ভব। এই কয়েন থাকে ডিজিটাল লকারে। কেউ পাসওয়ার্ড ভুললেই চিরকালের মতো কয়েন হারিয়ে যাবে। এটাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কয়েনের দাম বাড়ার একটা অন্যতম কারণ। এই কয়েনের সংখ্যা কিন্তু সীমিত। যার মূল্য ২০২১ সালের হিসেবে ২৮ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি। প্রতিদিন ২০ শতাংশ ওঠানামা করার নজিরও তৈরি হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সির দর কমবেশি। দামের এই ওঠানামাই অনেকের কাছে ক্রিপ্টোকারেন্সির মূল আকর্ষণ।
আজ ক্রিপ্টোকারেন্সি কিছু মানুষের কাছে খুবই আকর্ষণীয়। যে কেউ তাঁর পরিচয় গোপন রেখে অনেকটা সাধারণ মুদ্রার মতোই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে পারবেন। মাঝখানে কোনও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানব্যাতিত ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির ওয়ালেটে ‘ট্রান্সফার’ হয়। ফলে বিনিয়োগ বা লেনদেনের সম্পূর্ণ ভাগীদার সেই ব্যক্তি নিজেই। ঠিক একই কারণে, বিপদে পড়লেও আবার নিজেকেই সামলাতে হবে। আরও স্পষ্টভাবে বললে, অজানা কোনও বিপদ এলে তা সামলানোর জন্য কোনও ক্রেতা সুরক্ষা দপ্তর বা সরকারি সংস্থার দায়বদ্ধতা থাকার সুযোগ প্রায় নেই বললেই চলে।
যুক্তরাষ্ট্রের হল শুরু, চীনের হল সারা:
বিটকয়েন মাইনিংয়ে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ‘খেলোয়াড়’ ছিল চীন। তবে যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ সেন্টার ফর অলটারনেটিভ ফাইন্যান্সের তথ্য বলছে, সে জায়গা এবার দখলে নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। মূলত সব ধরনের ভার্চ্যুয়াল মুদ্রায় লেনদেন নিষিদ্ধ করায় শীর্ষ অবস্থান হারাল চীন। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চীনের মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গত মে মাসের শেষ দিকে বিটকয়েনসহ সব ধরনের ক্রিপ্টোকারেন্সি লেনদেন ও মাইনিং (নতুন ভার্চ্যুয়াল মুদ্রা তৈরি) বন্ধে উদ্যোগ নেয়। এরপর এই খাত একরকম ধ্বংস হয়ে যায়। মাইনিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা কার্যক্রম বন্ধ করে দেন, কেউ কেউ বিদেশেও পাড়ি জমাতে শুরু করেন।
ভার্চুয়াল মুদ্রার ভবিষ্যৎ মার্কিন যুক্তরাষ্টে:
মারাত্মক গোপনীয়তা আর নিরাপত্তার চাঁদরে ঢাকা এই মুদ্রা হতে চীন কেন সরে গেল এটি একটি বিলিয়ন ডলারের প্রশ্ন। হয়ত চীনা প্রশাসন সময়ের আগে এটির পৃষ্ঠপোষকতা করে প্রযুক্তি নির্ভর ফাটকাবাজির সম্ভাবনা দেখে পিছিয়ে গেছে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এখানে বড় ধরণের বাজি ধরেছে। প্রযুক্তি নির্ভর এইট মুদ্রা ব্যবস্থার বিকাশের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র আরো একবার বিশ্বে নিজ প্রভুত্ব কায়েম করতে মরিয়া হয়ে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র জানে ব্যক্তি অধিকার রক্ষার মাধ্যমে প্রযুক্তির কাঁধে সওয়ার হয়েই শুধু পুরোনো বিশ্ব-মোড়লিটা ফিরে পাওয়া যেতে পারে।
ভার্চুয়াল মুদ্রাই ভবিতব্য :
বিশ্ব-ব্যাপী অনলাইন মার্কেট আর ভার্চুয়াল দুনিয়ার জন্য ডিজিটাল মুদ্রার বিকল্প নেই। নিরাপত্তার সাথে নিমিষে কেনাকাটা আর মুদ্রা হস্তান্তর প্রক্রিয়া একমাত্র ক্রিপ্টোকারেরেন্সিতেই সম্ভব। ব্যক্তি পরিচয়ের গোপনীয়তা রক্ষা আর স্বচ্ছতার সাথে লেনদেন সংঘটন সামর্থ আর অন্য কোনো উপায়ে সম্ভব না। এই মুদ্রার প্রতি মানুষের তীব্র আকর্ষণ এবং ভার্চুয়াল দুনিয়ায় নিরাপত্তা সামর্থ বৃদ্ধি একে এরই মধ্যে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিনিময় মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশ একে পর্যবেক্ষনে রেখেছে।
পৃথিবীর এক বিরাট অংশ মানুষ তাদের বিনোদন আর দৈনন্দিন প্রয়োজনের সাথে ভার্চুয়াল জগৎকে একাকার করে ফেলেছেন। এখন গেমস মানেই ভার্চুয়াল রিয়েলিটি। এখন নতুনত্ব মানেই ভার্চুয়াল জগতের হাতছানি। আধুনিক মানুষের মনোজগত ভার্চুয়াল রিয়েলিটি দখল করে নিয়েছে। তাই তার যোগ্য সাথী হতে যাচ্ছে ভার্চুয়াল মুদ্রা -ক্রিপ্টোকারেরেন্সি। বিভিন্ন দেশের সরকার এই বিষয় মানতে বাধ্য হচ্ছে। সালভাদর হয়ত দেশ হিসেবে প্রথম স্বীকৃতি দাতা; কিন্তু প্রযুক্তি উন্নত দেশগুলোই এ মুদ্রার প্রধান পৃষ্ঠপোষক।
কাগজের মুদ্রা ৭ম শতাব্দীতে চীনে তাং রাজবংশের সময় প্রথম চালু হলেও ক্রমান্বয়ে ঊনবিংশ শতাব্দীতে এর বিশ্ব ব্যাপী বিস্তার ঘটে। মাত্র আড়াই শত বৎসরের মধ্যে এটি ভার্চুয়াল মুদ্রার মুখোমুখি হয়ে পড়েছে। ২০০৯ সালে আরম্ভ হওয়া নতুন মুদ্রা ব্যবস্থা মাত্র এক যুগের মধ্যে কাগজের মুদ্রাকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছে। কোনো কোনো বিজ্ঞজন মনে করেন প্রযুক্তির এই যুগে কাগজের মুদ্রা আর হয়ত দুই যুগ তার প্রাধান্য বজায় রাখতে পারবে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে আয় করার বিভিন্ন পদ্ধতি রয়েছে, যেমন ট্রেডিং, হোল্ডিং, স্টেকিং, মাইনিং, এয়ারড্রপ, ডিভিডেন্ডস, লেন্ডিং প্ল্যাটফর্ম এবং ডিফাই। প্রতিটি পদ্ধতির নিজস্ব সুবিধা ও ঝুঁকি রয়েছে। সঠিক জ্ঞান ও কৌশলের মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি থেকে লাভবান হওয়া সম্ভব, তবে বাজারের ঝুঁকির কথা মাথায় রেখে বিনিয়োগ ও কার্যক্রম পরিচালনা করা জরুরি। সর্বদা নিজের গবেষণার ওপর নির্ভর করুন এবং বিনিয়োগের আগে সঠিক পরামর্শ নিন।
FAQ (Frequently Asked Questions):
৩. ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ কি নিরাপদ?
ক্রিপ্টোকারেন্সিতে বিনিয়োগ ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, কারণ এর মূল্য দ্রুত পরিবর্তিত হয়। সঠিক গবেষণা এবং ঝুঁকি পরিচালনা কৌশল অবলম্বন করে বিনিয়োগ করা উচিত।
৪. মাইনিং করতে কী দরকার?
মাইনিং করতে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটার, নির্দিষ্ট সফটওয়্যার, এবং পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ দরকার হয়। এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া যা ব্লকচেইনের জন্য ট্রানজেকশন ভেরিফিকেশন করে।
৫. ডিফাই কী এবং এটি কিভাবে আয় করতে সাহায্য করে?
ডেসেন্ট্রালাইজড ফাইন্যান্স (DeFi) হল ব্লকচেইন প্রযুক্তির ওপর ভিত্তি করে নির্মিত আর্থিক প্রোটোকল, যা ব্যবহারকারীদের লেন্ডিং, বারোয়িং, সুদ অর্জন, এবং অন্যান্য আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করে।
৬. ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে নিরাপদ রাখা যায়?
ক্রিপ্টোকারেন্সি নিরাপদ রাখতে কোল্ড ওয়ালেট বা হার্ডওয়্যার ওয়ালেট ব্যবহার করা উচিত, যা ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন থাকে। এছাড়া, দুই-স্তর বিশিষ্ট প্রমাণীকরণ (2FA) এবং শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত।