আর্সেনিক দূষণের কারণ ও ফলাফল : আর্সেনিক যুক্ত পানি চেনার উপায় ।।

আর্সেনিক দূষণের কারণ ও ফলাফল : আর্সেনিক যুক্ত পানি চেনার উপায়

ভূমিকা:

বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা, চাঁপাই নবাব গঞ্জে ১৯৯৩ সালে নলকূপের পানিতে প্রথম গ্রহনযোগ্য মাত্রার চেয়ে বেশী পরিমাণে আর্সেনিকের সন্ধান পা্ওয়া যায় । এই জেলাতেই ১৯৯৪ সালে প্রথম আট জন মানুষকে আর্সোনিকেসিস রোগী হিসাবে সনাক্ত করা হয় । এর পর বাংলাদেশের বিশাল এলাকা জুড়ে আর্সোনিকোসিস রোগীর সংখ্যা  দিন বেড়ে চলেছে আর এটা দেখা দিয়েছে গুরুতর স্বাস্হ্য সমস্যা হিসাবে । আর্সেনিক প্রোগ্রাম, স্বাস্হ্য অধিদপ্তর ২০১১ সালের জুন মাস পরযন্ত ৫৬৭৫৮ জন আর্সোনিকোসিস রোগী সনাক্ত করেছে । যদিও আরোসানিকোসিস পৃতিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যমান কিন্তু বাংলাদেশের জন্য এটি একটি নতুন রোগ । বাংলাপদেশের মানুষের এই রোগের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে কোনই ধারণা নাই, তাই পরযাপ্ত তথ্যের অভাবে  সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি বর্গের এই রোগের বিস্তৃতি, প্যাথজেনেসিস, ও ব্যবস্হাপনা সম্পর্কে সম্যক ধারণা নাই । যেহেতু দূষিত নলকূপের সংখ্যার সাথে রোগীর সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে , এমতাবস্হায় বাংলাদেশের সকল মানুষের আর্সোনিকোসিস রোগ ও চিকিৎসা ব্যবস্হাপনার পরযাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতার প্রয়োজন ।

আর্সেনিক দূষণের কারণ ও ফলাফল

আর্সেনিক সমস্যা : প্রাথমিক ধারণা

() আর্সেনিক তার সাধারণ ধর্ম

***আর্সেনিক একটি মেটালয়েড স্বাদহীন, বর্ণহীন, গন্ধহীন ভঙ্গুর মৌলিক পদার্থ । ইহা পানি, মাটি, বায়ুউদ্ভিদ এবং প্রাণী সহ প্রকৃতির সর্বত্র বিরাজমান । রাসায়নিক বিক্রিয়ায় এটি খুবইসক্রিয় এবং সহজেই অন্য পদার্থের সাথে বন্ধন তৈরী করতে পারে । একদিকে অক্সিজেন,ক্লোরিন, গন্ধক, কার্বন, হাইড্রোজেন অন্যদিকে সীসা, পারদ, সোনা, লোহার সংগে যৌগরুপে আর্সেনিক অবস্হান করে ।

***আর্সেনিক সাধারণত দুই প্রকার যেমন-জৈব ও অজৈব । অজৈব আর্সেনিক জৈব আর্সেনিকের চেয়ে বেশী ক্ষতিকারক । পানিতে প্রধানত অজৈব ত্রিযোজনী ও পঞ্চযোজনী আর্সেনিক পাওয়া যায় । ত্রিযোজনীআর্সেনাইট পঞ্চযোজনী আর্সেনাইট এর চেয়ে প্রায় ৬০ গুণ বেশী ক্ষতিকারক ।

প্রাচীনকাল থেকে মানব সভ্যতায় আর্সেনিক ব্যবহৃত হয়ে আসছে-এর মাঝে কৃষিকাজে, কাঠ সংরক্ষণে, কীটনাশকহিসাবে এবং কাঁচ শিল্পে অপরিহার‌য উপাদান হিসাবে ব্যবহৃত হয় ।

(2) প্রাকৃতিক পরিবেশে আর্সেনিক কোথায় পাওয়া যায়

***ভূ-পৃষ্টেআর্সেনিকের মূল উৎস আগ্নেয়শীলা । ইহা মাটি, পানি, বায়ু, উদ্ভিদ এবং প্রাণী সহ পকৃতির সর্বত্র বিরাজমান ।প্রকৃতিতে আর্সেনিক সাধারণত মুক্ত মৌল হিসাবে পাওয়া যায়না । রাসায়নিক ভাবে কোন না কোন মৌল বস্তুর সাথে যৌগ রুপে বিরাজমান। ভূ-গর্ভস্ত পানিতে সাধারণত অজৈব আর্সেনিক পাওয়া যায় ।


(৩) বাংলাদেশের ভূ-গর্ভস্ত পানিতে আর্সেনিক দুষণ

***ভূ-গর্ভস্তপানিতে অধিক মাত্রায় আর্সেনিকের উপস্তিতির প্রকৃত কারণ এখনও পরযন্ত একটি বিতর্কিত বিষয় । বাংলাদেশ গঙ্গা অববাহিকার নিম্নাংশে অবস্তিত । ভারতের পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের ভূ-খন্ড, হাজার বছরের গঙ্গার ধারায় বাহিত পলি সঞ্চিত হওয়ার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে । প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হয়েছিল যে, গঙ্গার পলি থেকে উৎপন্ন ব-দ্বীপে ভূ-গর্ভের স্তরে বিভিন্ন স্হানে আর্সেনিক লৌহের সাথে যেগৈ রুপে আর্সেনোপাইরাইট হিসাবে প্রচুর পরিমাণে সঞ্চিত হয়েছে যা থেকে ভূ-গর্ভস্ত পানিতে আর্সেনিক দূষণ ঘটছে । তবে সম্প্রতি দেখা যাচ্ছে যে, গাঙ্গেয় ব-দ্বীপ ছাড়াও বাংলাদেশের অন্যান্য পাললিক ও সমতল ভূমির ভূ-গর্ভস্ত পানিতে আর্সেনিক দূষণ ঘটেছে । এখন বলা হচ্ছে যে, ব্রম্মপুত্র ও মেঘনা সহ অন্যান্য বৃহত্তর নদী-বাহিত পলিতেওমিশ্রিত আর্সেনিক  এসব অঞ্চলের ভূ-গর্ভে সঞ্চিত হয়েছে । বিভিন্ন নদ-নদী বাহিত পলিতে আর্সেনিক মিশ্রনের উৎস হচ্ছে রাজমহল, হিমালয় এবং অন্যান্য পর্বতে সঞ্চিত আর্সেনিকযুক্ত শিলা ।

সাম্প্রতিকবছরগুলিতে পশ্চিম বাংলা সহ বাংলাদেশের কৃষি, শিল্প, গৃহস্হালী ও পানীয় জলের  উৎস হিসাবে নলকূপের মাধ্যমে প্রচুর পরিমাণেভূ-গর্ভস্হ পানি উত্তোলন করা হচ্ছে এ কারণে ভূ-গর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে গেছে ।পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়ার ফলে মাটির কণার মধ্যবর্তী স্হান শূন্য হয়ে বাতাস প্রবেশ করছে । ফলে ভূ-গর্ভে অক্সিজেন বিস্তৃতি ঘটেছে । এই অক্সিজেন, লৌহ ও আর্সেনিক যৌগের (আর্সেনোপাইরাইট) সাথে বিক্রিয়ার ফলে মুক্ত আর্সেনিক পাওয়া যায় এবং মুক্ত আর্সেনিকই আর্সেনিক দূষনের কারণ বলে অধিকাংশ বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন

তবে সাম্প্রতিক কালের কোন কোন জ্ঞিানী তাদের গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে ধারণা করেছেন যে, আর্সেনিক ফেরিক অক্সি-হাইড্রোক্সাইড এর সাথে যৌগ হিসাবে থাকে এবং সেখান থেকে বিজারণপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভূ-গর্ভস্হ পানিতে আর্সেনিকের দূষণ ঘটছে ।

বাংলাদেশে খাবারপানিকত আর্সেনিকের সর্বোচ্চ গ্রহনযোগ্য মাত্রা প্রতি লিটারে ০.০৫ মিলিগ্রাম ।


(৪) আর্সেনিক সমস্যার ব্যাপকতা

     গত শতকের শেষ দিকে বাংলাদেশ তার জনগণের নিকট ৯৭ ভাগ জীবাণু মুক্ত নিরাপদ পানি সরবরাহ করার কৃতিত্ব অর্জন করে । কিন্তু দু:খের বিষয় বেশীর ভাগ স্হাপনকৃত নলকূপ যা পানি বাহিত রোগ প্রতিরোধের জন্য স্হাপন করা হয়েছিল, তা এখন মারাত্মক জনস্বাস্হ্য হুমকি হিসাকব দেখা দিয়েছে ।

যদিও আর্সেনিক দূষণ ভূ-গর্ভস্হ পানিতে বাংলাদেশ ছাড়াও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা দিয়েছে যেমন-ভারত, নেপাল, মায়ানমার, ভিয়েবনাম, থাইল্যান্ড,কম্বোডিয়া, লাউস, চীন, জাপান, তাইওয়ান, আর্জেনটিনা, আমেরিকা, কানাডা, চিলি, মেক্সিকো,মঙ্গোলিয়া, ঘানা, রোমানিয়া, স্লোভানিয়া এবং হাঙ্গেরী । গঙ্গা উপত্যকার নিচু অঞ্চল, পদ্মা এবং মেঘনার ভাটি অঞ্চল জনসংখ্যার দিক দিয়ে পৃথিবীর সর্বাধিক আর্সেনিক দূষণ বলে বিবেচনা করা হয় । এই বিষাল এলাকার জনগোষ্টি ক্রমাগত  আর্সেনিক দূষণের হুমকির মধ্যে পানীয় জল ব্যবহার মারাত্মক রোগের কারণ হিসাবে দেখা দিয়েছে । যখন দেশের আপামর জনগণ অগভীর নলকূপের মাধ্যমে উত্তোলিত পানীয় জল ব্যবহারে অভ্যস্ত হয়েছে, ঠিক সেই সময়ে পানিতে অতিমাত্রায় আর্সেনিকের উপস্তিতি পরিলক্ষিত হয় । দেশের ৬৫টি টি জেলার মধ্যে ৬২টি টিতে আর্সেনিক দূষণ পাওয়া যায় । বিভিন্ন জরীপে দেখা যায় দেশের প্রায় ৩০% নলকূপের পানি আর্সেনিক দূষিত । ২০১১ সালের জুন মাসপরযন্ত বাংলাদেশে রোগী সনাক্ত করা হয়েছে ৫৬৭৫৮ জন

আর্সেনিক দূষণের কারণ ও ফলাফল


***২. আর্সেনিকোসিস কি


·                পানি বা অন্য কোন মাধ্যমে গ্রহনযোগ্য মাত্রার অধিক পরিমাণে আর্সেনিক দীর্ঘকাল (কমপক্ষে ৬ মাস) যাবৎ মানবদেহে প্রবেশ করলে চামড়ায় বিশেষ ধরণের লক্ষণ দেখা দেয়, তাকে আর্সেনিকোসিস বলে । এতে শরীরের ভিতরের বিভিন্ন অঙ্গ প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হতেও পারে, এমনকি ক্যান্সার ও হতে পারে।  

আর্সেনিক দূষণের কারণ ও ফলাফল

আর্সেনিকের লক্ষণ ও উপসর্গ সমূহ:

***লক্ষণ সমূহ:

আর্সেনিক দূষণের কারণ ও ফলাফল

আর্সেনিক দূষণের কারণ ও ফলাফল

***মেলানোসিস কি

দীর্ঘদিন যাবৎ(গ্রহন মাত্রার অধিক) আর্সেনিক গ্রহনের ফলে যদি কারো শরীরের বিভিন্ন অংশে বিশেষত: বুকে ও পিঠে অসংখ্য ছিট ছিট কালচে, বাদামী বা তিলের ন্যায় কালো কালো দাগ দেখা দেয় তবে তাকে মেলানোসিস বলে। সাধারণত: শরীরের ঢাকা অংশেই মেলানোসিস দেখা দেয়।

***লিউকোমেলানোসিস কি

শরীরের মেলানোসিস আক্রান্ত স্হানে যদি কালচে দাগের মধ্যে সাদা অথবা ঘোলা সাদা দাগ দেখা যায় তবে তাকে লিউকোমেলানোসিস বলে। যা মেলানোসিসের সাথে পাওয়া যায়।

***কেরাচটাসিস কি

যদি কারো উভয় হাতের তালু ও উভয় পায়ের তলদেশে একই সাথে অসংখ্য মিহি দানা বা চামড়া শক্ত ও খসখসে হয়ে যায় যা কেবল অনুভব করা যায় তাকে আর্সেনিক জনিত কেরাটোসিস বলে।

***হাইপার কেরাটোসিস কি

উভয় হাতের তালু ও উভয় পায়ের তলদেশে কড়া বা আঁচিলের ন্যায় মক্ত অসংখ্য বিভিন্ন আকারের দানা যা খালি চোখে দেখা যায় তাকে হাইপার কেরাটোসিস বলে।

***আর্সেনিক রোগী সনাক্তকরণ:

যদি কারো শরীরে শুধু মেলানোসিস কিংবা মেলানোসিস সহ উভয় হাতের তালু ও পায়ের তলদেশে কেরাটোসিস পরীলক্ষিত হয় এবং দীর্ঘদিন যাবৎ তার খাবার পানিতে আর্সেনিকের দূষণের ইতিহাস পাওয়া যায় তবে তাকে সম্ভাব্য আর্সেনিকোসিস রোগী হিসাবে সনাক্ত করা যায়।

***আর্সেনিকোসিস রোগের জটিলতা:

  • (১) গ্যাংগ্রিন বা পচন
  • (২) বিভিন্ন ধরণের ক্যান্সার
  • (৩) দীর্ঘস্হায়ী ক্ষত
  • (৪) লিভার, মুত্রাশয় (ব্লাডার), ফুসফুস ও কিডনী আক্রান্ত হতে পারে।


***আর্সেনিক রোগীর চিকিৎসা ও ব্যবস্হাপনা:

 -আর্সেনিকোসিস থেকে সম্পূর্ণ নিরাময়ের কোন চিকিৎসা পদ্ধতি এখনো আবিস্কৃত হয়নি। তবে প্রাথমিক পরযায়ে রোগ নির্ণয় এবং আর্সেনিক দূষিত পানি (আর্সেনিক যুক্ত নলকূপের পানি) পান বন্ধ করলে রোগীরউন্নতি অনেকাংশে সম্ভব হয়।

সেই সাথে ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ পুষ্টিকরখাদ্য, তাজা ফলমূল গ্রহন করলে রোগ নিরাময় সহজ ও দ্রুততর হয়। সফল চিকিৎসার জন্য প্রাথমিক পরযায়ে রোগ নির্ণয অত্যাবশ্যক।

আর্সেনিকোসিসে কোন সুনির্দিষ্ট চিকিৎসা ব্যবস্হা না থাকায় রোগ প্রশমনের নিমিত্তে আমাদের দেশে বর্তমানে নিম্নলিখিত চিকিৎসা ব্যবস্হা চালু আছে।

যেমন-

(১) আর্সেনিক দূষিত নলকূপের পানি পান বন্ধ করা এবং রান্নার কাজে ব্যবহার না করা।

(২) ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ পুষ্টিকর খাদ্যদ্রব্য গ্রহন। ভিটামিন এ, ই, সি এবং ফলে আর্সেনিক বিষক্রিয়া উপসম ত্বরান্বিত করে। এই ভিটামিন গুলি আর্সেনিকোসিস রোগীকে (প্রাপ্ত বয়স্ক) নিম্নলিখিত মাত্রায় দেয়া হয়। ভিটামিন-এপ্রতিদিন ৫০,০০০ আই,ইউ, ভিটামিন-ই প্রতিদিন ২০০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-সি প্রতিদিন ৫০০মিলিগ্রাম। এই ঔষধ একটানা তিন মাস খাবার পর ২মাসের জন্য বন্ধ রাখতে হবে, কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া না হলে এবং পরবর্তীতে প্রয়োজন হলে আবার তিন মাসের জন্য ইহা ব্যবহার করা যেতে পারে। স্বল্প আক্রান্ত রোগীদেরকে একদিন অন্তর অন্তর উপরোক্ত মাত্রায় ভিটামিন গুলি দেয়া যেতে পারে। শিশুদের ক্ষেত্রে ভিটামিন গুলির মাত্রা বয়স ও ওজন অনুযায়ী নির্ধারণ করা বাঞ্চনীয়্ আর্সেনিকোসিস রোগীর চিকিৎসা উজেলা স্বাস্হ্য কমপ্লেক্সের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয়।

গর্ভবতী মায়েদের ক্ষেত্রে এউ ঔষধ ব্যবহার করা যাবেনা।

(৩) কেরাটোসিস অর্থাৎ হাত ও পায়ের তালুর শক্ত ও গোটা হয়ে যাওয়ার চিকিৎসায় হালকা গরম পানিতে হাত/পা কিছুক্ষণ রেখে ঘসলে শক্ত গোটা মসৃণ হয়, এর সাথে হাত ও পায়ের তালুতে ৫-১০% ইউরিয়া স্যালিসাইলিক এসিড সম্বলিত মলম প্রয়োগকরলে আরো উপকার পাওয়া যায়। কিন্তু স্বাভাবিক চামড়ায় এ মলম লাগানো উচিৎ নয়।

(৪) বেশী পরিমাণে আমিষ জাতীয় খাদ্য গ্রহন করলেবিশেষত: গ্রামাঞ্চলে আমিষ সমৃদ্ধ উদ্ভিদ জাতীয় খাদ্য যেমন- সীমের বিচি, কাঁঠালের বিচি,মটরশুটি, বরবটি, ডাল ইত্যাদি তাছাড়া বিভিন্ন রকমের শাক-সবজি যেমন-পুঁইশাক, সজনে শাকইত্যাদি বশেী করে খেলে এ রোগের লক্ষণ ধীরে ধীরে কমে এসে নিরাময় হতে থাকে।

***বিকল্প পানি সরবরাহ:

বিকল্প পানির জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি সমূহ উল্লেখ করা যায়:


***ভূ-উপরিভাগের পানি:

ভূ-উপরিভাগের পানি যেমন-নদী, দীঘি ও সংরক্ষিত পুকুরের পানি নিরাপদ করে (ফুটিয়ে) পান করা যেতে পারে। বাংলাদেশের প্রায় সর্বত্রই মানসম্মতও পরযাপ্ত পরিমাণে ভূ-উপরিভাগের পানি পাওয়া যায়। যদি নদী বা দীঘির পানি সঠিকভাবে সংরক্ষণ করা হয় তবে সারা বৎসর নিরাপদ পানি পাওয়া সম্ভব।


***পাইপের মাধ্যমে সরবরাহকৃত নিরাপদ পানি:

এই পদ্ধতি সাধারণত: পৌরসভা এবং বড় বড় শহরেপানি সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ঘন বসতি পূর্ণ এলাকার ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি গ্রহনযোগ্য। কিন্তুগ্রাম এলাকায় এই পদ্ধতি ব্যয়বহুল হবে।


***কূয়ার পানি: 

কূয়ার পানি আর্সেনিক নিরাপদ হলেও পানি বাহিত রোগ জীবানু থাকার সম্ভাবনা থাকে। তাই কুয়ার পানি বিজ্ঞান সম্মত উপায়ে নিরাপদ করে পান ও রান্নার কাজে ব্যবহার করা যায়।

***গভীর নলকূপ:

যে এলাকায় উপরে উল্লেখিত কোন পদ্ধতিই কার্যকর না সে এলাকায় গভীর নলকূপ স্হাপন করা যেতে পারে

***পন্ড সেন্ড ফিল্টার:

ভূ-উপরিভাগের পানি নিরাপদ করার সহজ পদ্ধতি হলো পন্ড সেন্ড ফিল্টার সঠিকভাবে সংরক্ষণ করলেিইহা থেকে আর্সেনিক এবং জীবাণু মুক্ত পানি পাওয়া সম্ভব

***বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ:

বৃষ্টিরি পানি বাংলাদেশের জনগণের প্রাকৃতিক সম্পদ বর্ষার মৌসুমে বৃষ্টির পানি একটি বড় পাত্রে সংরক্ষণ করে সারা বছর ব্যববহার করা যেতে পারে বৃষ্টির পানি নিরাপদ

 

***কিট তার ব্যবহার:

পানিতে আর্সেনিকের মাত্রা পরিমাপ সাধারণত: দুই ভাবে করা যায় প্রথমত: ল্যাবরেটরী পরীক্ষা এবং দ্বিতীয়ত: ফিল্ড কিট ব্যবহারের মাধ্যমে ওয়েগটেক, মার্ক, নিপসম, হ্যাক কিট দ্বারা মাঠ পরযায়ে খুব সহজেই নলকূপের পানি পরীক্ষা করা যায় টেষ্ট কিট গুলো বাংলাদেশে পাওয়া যায় এবং প্রত্যন্ত এলাকা পরযন্ত নিয়ে যাওয়া সম্ভব নিম্নে ওয়েগ টেক কিটের বিভিন্ন অংশ উল্লেখ করা হলো:

  • () কাচের দাগাংকিত ফ্লাক্স
  • () বাঙ
  • () - ট্যাবলেট
  • () - ট্যাবলেট
  • () কালো ফিল্টার
  • () লাল ফিল্টার
  • () কালার চার্ট

 

***ওয়েগটেক কিটের মাধ্যমে পানি পরীক্ষা পদ্ধতি:

*নমুনা পানি ফাস্ক এর ৫০ দাগ পরযন্তনিয়ে সমান জায়গায় রাখুন

*বাঙটি পরীক্ষা করতে হবে যে স্লাইড দুটি পূর্ণভাবে বাঙে প্রবেশ করেছে কিনা

*এবার - ট্যাবলেট/পাউডার ফ্লাস্কে ঢালুন

* সতরকতার সাথে এক হাতে - ট্যাবলেট নিয়ে ফ্লাস্কে ছাড়ুন এবং অন্য হাতে দ্রুত বাঙ ডিভাইসটি উপর হতে ভালভাবে মুখ বন্ধ করুন

*দ্রুততার সাথে বাঙটি সোজা এবং সঠিকভাবে ফ্লাস্কের মুখে লাগিয়ে দিন ২০ মিনিট পর কারৈা ফিল্টার হোল্ডারটি খুলে নিন

*কালো ফিল্ডার স্লাইড আর্সেনিক গ্যাস সংগ্রহ করে লাল ফিল্ডার স্লাইড অতিরিক্ত আর্সেনিক গ্যাস সরিয়ে ফেলে

* বাঙ ডিভােইস হতে কালো ফিল্টার স্লাইড খুলে নিন

* কালার চার্টের সাথে মিলিয়ে কাছাকাছি রংটি বাছাই করুন

* কালার চার্টের যে রংয়ের সাথে মিলেছে তার বিপরীত আর্সেনিক মাত্রা লিখা আছে তাহাই হবে পানিতে আর্সেনিকের মাপের সঠিক মাত্রা

প্রচারণা:

*এমন খাবার পানি চাই, যে পানিতে আর্সেনিক রোগ জীবাণু নাই

*টিউবওয়েলের পানির সাথে মাটির নিচ থেকে আর্সেনিক উঠে আসে

*লাল মুখো টিউবওয়েলের পানি দূষণ যুক্ত

*লাল রং দেয়া টিউবওয়েলের পানি পান করবেননা

*দীর্ঘদিন আর্সেনিক দূষণযুক্ত পানি পান করলে আর্সোনিকোসিস রোগ হয়

*আর্সোনিকোসিস কোন বংশগত কিংবা ছোঁয়াচে রোগ নয়

*আর্সেনিক দূষণে আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে স্বাভাবিক আচরণ সামাজিক সম্পর্ক রাখুন
*সবুজ মুখো টিউবওয়েলের পানি আর্সেনিক দূষণ মুক্ত
সবুজ মুখো কলের পানি পান করুন রান্নার কাজে ব্যবহার করুন
*লাল মুখো কলের পানি অন্য কাজে ব্যবহার করুন
* মনে রাখবেন পানি ফুটালেও আর্সেনিক যায়না
* যদি সবুজ মুখো কলের পানি পাওয়া না যায় তবে বধিমিত বৃষ্টিরি পানি সংগ্রহ করুন বা পুকুরের পানি ফটিয়ে পান করুন
* আর্সেনিকোসিস রোগের কোন সুনির্দিষ্ট ঔষধ নাই তবে নিরাপদ পানি, প্রচুর শাক-সবজি এবং পুষ্টিকর খাদ্য রোগ থেকে আরোগ্য লাভে সহায়তা করে
* আর্সেনিকোসিস রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেতে দীর্ঘদিন সময় লাগে এবং আরোগ্য লাভেও দীর্ঘদিন সময় লাগে


***আমিষ ওভিটামিন সমৃদ্ধ সহজলভ্য কিছু খাদ্য তালিকা:

আমিষ: মাছ, মাংস,ডিম, দুধ, মুগডাল, মসুর ডাল, ছোলা, খেসারী ডাল, সয়াবিন, চীনাবাদাম,সীমের বিচি,কাঁঠালের বিচি ইত্যাদি ।

***ভিটামিন এ: (বিটা কেরোটিন)চর্বি জাতীয় খাবার, কলিজা, সজনে শাক, ডাটা শাক, পুঁই শাক, কলমী শাক, কচু শাক, পাট শাক, গাজর, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি ।

***ভিটামিন সি: টমেটো, আমলকি, পেয়ারা, লেবু আমড়া ইত্যাদি ।

***ভিটামি ই: সয়াবিন ও বাদাম, মলা ও ঢেলা মাছ, ডিমের কুসুম । এ ছাড়া শাক জাতীয় সবজিতে পাওয়া য়ায়


আরো জানতে হলে ক্লিক করুনপুষ্টি সমস্যা প্রতিরোধে আমাদের করণীয়


















إرسال تعليق

أحدث أقدم

p